বৃহস্পতিবার, জানুয়ারি ১৬, ২০২৫
প্রচ্ছদটপগণমাধ্যমের স্বাধীনতার সুযোগে কিছু পত্রিকা ‘অপসাংবাদিকতায় লিপ্ত

গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সুযোগে কিছু পত্রিকা ‘অপসাংবাদিকতায় লিপ্ত

image_48162গণমাধ্যমে স্বাধীনতার নামে ‘অপসাংবাদিকতা’ রুখতে সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রয়োজন বলে মত দিয়েছেন সাংবাদিকসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।

শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) জার্নালিজম অ্যান্ড পিস ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘গণমাধ্যম: স্বাধীনতা ও দায়বদ্ধতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এ মত দেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক হারুন হাবীব একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। পরে তার সঞ্চালনায় বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা আলোচনায় অংশ নেন।

ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি ইনডিপেন্ডেন্টের সম্পাদক মাহবুবুল আলম বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমের যে চিত্র দেখা যাচ্ছে তা আগে ছিল না। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সুযোগে কিছু পত্রিকা ‘অপসাংবাদিকতায় লিপ্ত।’

তিনি বলেন, ‘উন্নত বিশ্বের বেশ কিছু দেশে সাংবাদিকরা নিজেরাই কোড অব কনডাক্ট ঠিক করেছে। বাংলাদেশেও এমন হওয়া উচিত। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা মানে এই না যে, যার যা খুশি তাই করবে।’

জনকণ্ঠের উপদেষ্টা সম্পাদক তোয়াব খান বলেন, ‘স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী গণমাধ্যমের সুনাম ক্ষুণ্ন করছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ভোগ করে গোষ্ঠীটি সমাজে বিশৃংখলা সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকরা নিজের বিবেক, সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে দায়বদ্ধ। সংবিধান মেনে চললে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় নতুন কোনো নীতিমালা তৈরির প্রয়োজন নেই। সুস্থ ধারার গণমাধ্যমের বিকাশের জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।’

ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, ‘বর্তমানে গণমাধ্যমে সবচেয়ে বড় সংকট হচ্ছে পেশাদারিত্বের অভাব। পেশাদারিত্ব না থাকায় স্বাধীনতার নামে অপসাংবাদিকতা ও দুর্বৃত্তায়ন হচ্ছে। সাংবাদিকদের রাজনৈতিক দলের লেজুরবৃত্তি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’

বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম বলেন, ‘যেকোনো দল ক্ষমতায় যাওয়ার পর গণমাধ্যমকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা করে। তারা সাংবাদিকদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে। সাংবাদিকদের দায়বদ্ধতা আত্মকেন্দ্রীক না হলে নীতিমালা তৈরি করে তা সৃষ্টি করা যায় না।’

তিনি বলেন, ‘দলবাজি করতে গিয়ে শুধু সাংবাদিক নয়, শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী ও আইনজীবীসহ অনেকেই পেশাদারিত্ব ও দায়বদ্ধতা থেকে সরে পড়ছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক এটিএম সফিউল আলম ভূঁইয়া বলেন, ‘অনেক গণমাধ্যম স্বাধীনতার নামে স্বেচ্ছাচারিতা করছে। নিরপেক্ষতা বজায় রাখছে না। এ থেকে গণমাধ্যমকে বেরিয়ে আসতে হবে।’

বালাদেশ সংবাদ সংস্থার (বিএসএস) প্রধান সম্পাদক আজিজুল ইসলাম ভূইয়া বলেন, ‘খোদ সম্পাদকদের মধ্যে বিভেদ রয়েছে। সদ্য গঠিত এডিটরস কাউন্সিল নিয়ে আমি আশাবাদী না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রহমান বলেন, ‘“পরমতসহিষ্ণুতা হচ্ছে গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। কিন্তু সব কিছুর একটা সীমা আছে। স্বাধীনতাকে আমরা অপব্যবহার করছি। স্বাধীনতার নামে স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধে নীতিমালা করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যম পেশাদারিত্ব থেকে সরে যাচ্ছে। দলীয় বিবেচনায় খবর প্রকাশ করা হচ্ছে। করপোরেট পুঁজির দাসত্ববরণে ছুটে চলেছে এ খাতটি।’

ইত্তেফাকের নির্বাহী সম্পাদক শাহীন রেজা নূর বলেন, ‘পেশাদারিত্বের অভাবে গণমাধ্যমে সংকট তৈরি হয়েছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা মালিকের না সাংবাদিকের তা স্পষ্ট নয়।’

দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান বলেন, ‘কারো স্বাধীনতাই শর্তহীন নয়। বর্তমানে বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যম অন্যান্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি স্বাধীনতা ভোগ করছে।’

হারুন হাবীব তার প্রবন্ধে বলেন, ‘“বাংলাদেশে অনেক গণমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির হাতে। মৌলবাদী মিডিয়া সমাজকে পেছনে টানছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পরিবর্তে লক্ষ্যস্থলে পৌঁছার জন্য এসব মিডিয়া ব্যবহৃত হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী রাজনীতির হাতিয়ার বানানো হচ্ছে। একদিকে তারা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার দাবিতে সোচ্চার হচ্ছে, অন্যদিকে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ধারাকে পরিকল্পিতভাবে আঘাত করছে। যে কারণে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সীমা বা পরিধি সমালোচিত হচ্ছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ