হলিউডে এমন কিছু বিয়ের ঘটনা ঘটেছে, যেগুলোকে আসলে বিয়ে বলে ভাবতেই বিভ্রম লাগে। প্রেমিকার সাথে ডেটিংও এসব বিয়ের চেয়ে খানিকটা দীর্ঘায়িত হয়ে থাকে।
বিয়ে ঠিক হয় স্বর্গে, আর ভাঙে মর্ত্যে। আর এ ভাঙা-গড়ার কাজটা খুব দ্রুতই সারতে পারেন হলিউডের তারকারা। তাদের অনেকে আবার বিয়ে সম্পর্কতেই বিশ্বাসী না। কিন্তু সেই কঠিন বিশ্বাসটুকু যারা করতে পারেন, তাদের জন্য সিদ্ধান্ত নেয়াটা নিশ্চয় খুব ছোটখাটো ব্যাপার না। বিশ্বাসের পাহাড় ডিঙিয়ে বিয়ে করে আবার সে বিয়ে তছনছ করে দেয়াটা তাই বেশ আশ্চর্যের বৈকি।
হলিউডের কিছু বিয়ে আর বিচ্ছেদের ঘটনা দেখলে মনে প্রশ্ন জাগে, বিয়ে পুতুল খেলার মত কিনা?
প্রশ্নটার উত্তর তারাই ভালো বলতে পারবেন। এখন শুনা যাক ক্ষণিক সময় অথবা অল্প ক`দিনের জন্য যারা দম্পতি হওয়ার সৌভাগ্য (নাকি দুর্ভাগ্য) অর্জন করেছেন তাদের কথা। খুব অল্প সময় বিবাহ বন্ধনে থাকা যুগলদের নিয়েই আমাদের এবারের আয়োজন–
১. রবিন গিভেন্স-মারিনোভিচ (স্থায়িত্ব- ৭ মিনিট)
এই বিয়েটা নিয়ে যথেষ্ট হাসাহাসি করে মানুষ। মডেল অভিনেত্রী রবিন গিভেন্স ও মারিনোভিচের বিয়ের আয়ু এত কম যে, বিয়ে হয়েছিল কি হয়নি তা নিয়ে নিজেদের মধ্যেই সন্দেহ দেখা দেবে।
বিয়ের মাত্র সাত মিনিট পরই তাদের ডিভোর্স হয়। নিন্দুকদের মন্তব্য, বেচারারা বিয়ের স্মৃতি স্বরুপ একটা ছবিও তুলতে পারল না! এটি ১৯৯৭ সালের ঘটনা। তবে সাত মিনিটে কী এমন ঘটল যে বিয়ে ভাঙতে হল, তা নিয়ে মুখ খুলেননি কেউই।
এর আগে রবিন গিভেন্স বিয়ে করেছিলেন বক্সার মাইক টাইসনকে। সে বিয়ে বিচ্ছেদ ছিল পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দিয়ে। টাইসন স্ত্রীর বিরুদ্ধে এনেছিলেন অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ, আর গিভেন্স বলেছিলেন তাকে শারিরীক ও যৌন নির্যাতনের কথা। মর্মান্তিক ব্যাপার হলো ১৯৮৯ সালের ভালোবাসা দিবসেই দুজনের ছাড়াছাড়ির ঘোষণা দেন টাইসন।
২. রুডলপ ভ্যালেন্তিনো-জিন অ্যাকার (স্থায়িত্ব- ৬ ঘণ্টা)
ইতালিয়ান অভিনেতা ‘লাতিন লাভার’ বলে খ্যাত ছিলেন রুডলফ ভ্যালেন্তিনো। বেচারা বিয়ে করেছিলেন আমেরিকান অভিনেত্রী জিন অ্যাকারকে।
কিন্তু আমেরিকান এ অভিনেত্রীকে বিয়ে করার সময় তার সম্পর্কে কোন ধারণাই ছিল না আবেগপ্রবণ ভ্যালেন্তিনোর। জিন ছিলেন লেসবিয়ান। বিয়ের ছয় ঘণ্টা পরই জিন বিবাহে বিচ্ছেদ ঘটান। ভ্যালেন্তিনোরও কিছু করার ছিল না।
কারণ বিবাহিত জীবনের সে ছয় ঘণ্টাই হোটেল রুমে নববধু কর্তৃক তালাবদ্ধ থাকতে হয়েছে তাকে।
৩. ব্রিটনি স্পিয়ার্স-জেসন আলেক্সান্ডার (স্থায়িত্ব- আড়াই দিন)
ব্রিটনির ছেলেবেলার বন্ধ জেসন আলেক্সান্ডার। ২০০৪ সালের জানুয়ারিতে খুব উৎসাহের সাথে লাসভেগাসের একটি চার্চে গিয়ে বিয়ে করেন দুজন। বিয়ের সময় স্পিয়ার্সের পরনে ছিল জিন্স আর মাথায় বেসবল ক্যাপ। ঘটা করে ঘোষণা দেন আজীবন একসাথে থাকবেন। চারিদিকে শুরু হয় হইচই।
কিন্তু বিয়ের ঠিক ৫৫ ঘন্টা পরই বদলে যায় স্পিয়ার্সের গলার সুর। “আরে এটা ছিল মজা করার জন্য। আমরা একটু বেশিই করে ফেলেছিলাম।” বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটান দুজন।
তবে কয়েকদিন পরই জেসনের মন্তব্যে তৈরী হয় আলোচনার নতুন ইস্যু। জেসন বিয়ে বিচ্ছেদের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন খুবই হাস্যকর কিছু কথা।
জেসনের অভিযোগ ব্রিটনি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকেন না। প্রতিদিন গোসল করেন না। গায়ে নাকি তীব্র কটু গন্ধ!
প্রচণ্ড খামখেয়ালী এই গায়িকা এ পর্যন্ত দুই বার ডিভোর্স করেছেন।
৪. ক্যামেরন ইলেক্ট্রা-ডেনিস রডম্যান (স্থায়িত্ব- নয় দিন)
ক্যামেরন ইলেক্ট্রা এবং বাস্কেটবল খেলোয়াড় ডেনিস রডম্যানের বিয়েটা হয়েছিল লাস ভেগাসে ১৯৯৮ সালের নভেম্বরে। কিন্তু নয়দিন পরই ডিভোর্স। কারণ খুবই সাদামাটা- ডিভোর্সের আগের রাতে ড্রিংকস করেছিলেন রডম্যান। মদ খেয়ে মাতাল থাকায় বিয়ে হয়েছে কী হয়নি এ নিয়েই প্রশ্ন ওঠে।
ঐদিনই ডিভোর্সের জন্য আবেদন করেন ক্যামেরন। অবশ্য পরে মামলা মোকদ্দমা শেষ হওয়ার অপেক্ষায় আরও চার মাস একত্রেই কাটিয়েছিলেন তারা। যাক, তাও তো চেষ্টা ছিল!
বিয়েটাকে পরবর্তীতে ক্যামেরন তুলনা করেছিলেন চিজবার্গারের সাথে। বলেছিলেন “একটা ফাস্ট ফুড দোকাকের চিজবার্গারের মত”।
৫. চের-গ্রেগ অ্যালমান (স্থায়িত্ব- নয় দিন)
গ্রেগ অ্যালম্যান সর্বকালের সেরা ১০০ সিঙ্গারের একজন তিনি। ১৯৭৫ এর জুনে বিয়ে করেন অভিনেত্রী চেরকে। নয়দিন পরই বিচ্ছেদ ঘটান।
তাদের হানিমুনের সময় গুজব ছড়ায় যে গ্রেগ চেরকে ছেড়ে যেতে পারেন। গুজবে ঘি ঢালে হানিমুনের সময়ে অ্যালমানের মদ্যপানের ঘটনা।
পরবর্তীতে চের সংবাদমাধ্যমে দেয়া বিবৃতি ছিল এমন “আমি সবসময় বিশ্বাস করি যা ভুল হয় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তা থেকে সরে আসাই ভালো।”
৬. মারিও লোপেজ-আলী ল্যান্ড্রী (স্থায়িত্ব- ১৩ দিন)
৭ বছরের ডেটিং শেষে ১৩ দিনের সংসার! এক প্রতিযোগীতার অনুষ্ঠানে পরিচয় হয় অভিনেত্রী মারিও লোপেজ আর মডেল অ্যলী ল্যান্ড্রীর। পরিচয় থেকে সম্পর্ক। সাত বছর স্থায়ী এই সম্পর্ককে পূর্ণতা দিতে ২০০৩ সালে বিয়ে করেন দুজনে।
কিন্তু বিয়ের এই দুই সপ্তাহেই ল্যান্ড্রি অনুভব করেন লোপেজ তার সাথে সম্পর্কের ছয় বছরে অনেকবার অবিশ্বস্ত ছিল । ব্যস, বিচ্ছেদ।
৭. এডি মারফি-ট্রেসি এডমন্ডস (স্থায়িত্ব- দুই সপ্তাহ)
এই জুটি বিয়ে করেছিলেন অনিন্দ্য সুন্দর পলিনেশিয়ান বোরা বোরা দ্বীপে। কিন্তু তাদের বিয়ের সৌন্দর্য ফিকে হয়ে যায় দুই সপ্তাহ বাদেই।
চলচ্চিত্র প্রযোজক ট্রেসি এডমন্ডস আর এডি মারফি বিয়ে করেন ২০০৮ সালের শুরুতেই। ১৬ দিন পর মারফি সিদ্ধান্ত নিলেন ‘যে আমার জন্য বিয়ে নয়।’
অভিযোগ ওঠে এডি মারফি জনসমক্ষে ট্রেসির প্রতি অত্যন্ত আপত্তিকর ও অবমাননাকর আচরণ করেছেন।
বিচ্ছেদের সময় দুজনের বিবৃতি ছিল এমন, “বহু বিবেচনা ও আলোচনা শেষে আমরা যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আমরা আইনী পদক্ষেপে যাব। এটা প্রয়োজনীয় নয় যে আমাদের ভবিষ্যত সম্পর্ক কী হবে।”
এ পর্যন্ত ঘটা সবচেয়ে ভদ্র বিচ্ছেদ এটিই।
৮. ইথেল মারম্যান-আর্নেস্ট বর্গিন (স্থায়িত্ব- চার সপ্তাহ)
দুজনেরই এর আগে দু বিয়ে হয়েছে। দুই ব্যর্থ বিয়ের পর ভিন্ন ভিন্ন ঘাট থেকে এসে জড়ো হয়েছিলেন দুজন। কিন্তু ব্যাপক ভেবেচিন্তে করা বিয়েটা হানিমুনের সময়েই ভেস্তে যায়।
৯. ড্রিউ ব্যারিমোর-জেরমি থমাস (স্থায়িত্ব- ১ মাস ৮ দিন)
১৬ বছর বয়সে একবার বাগদানের আংটি পরেছিলেন ব্যারিমোর। কিন্তু বিয়ের কয়েক ঘণ্টা আগেই ভেঙ্গে যায় সে সম্পর্ক। এরপর যতবার প্রেমে পড়েছেন ততবারই বিয়ে করেছেন। তবে ভাঙ্গাভাঙ্গির পালাও তাল মিলিয়ে চলেছেই।
ব্যারিমোর হচ্ছেন তাৎক্ষণিক বিয়ে তাৎক্ষণিক বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয়া নায়িকা। ছয় সপ্তাহের ডেটিং শেষে থমাসকে বিয়ে করেন ব্যারিমোর।
১৯ বছর বয়সী ব্যারিমোর যখন ওয়েলস বার মালিক জেরমী থমাসকে বিয়ে করেন তখন তার বয়স ৩২। বিয়েটা হয়ও বার-এ বসে।
বিয়ের মাত্র ৩৮ দিনের মাথায় ব্যারিমোর বিচ্ছেদ ঘটান। কারণ? “শত্রুভাবাপন্ন পার্থক্য’। থমাসের সাথে বিচ্ছেদের পর কমেডিয়ান টম গ্রিনকে বিয়ে করেন ব্যারিমোর। সেই বিয়েটা টেকে ছয় মাস।
১০. পামেলা অ্যান্ডারসন-রিক সলোমন (স্থায়িত্ব- দুই মাস)
একমাত্র অভিনেত্রী যিনি এক বছরে দুই দুইবার বিয়ে বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটিয়েছেন। ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে বিয়ে করেন রিক সলোমনকে। কিন্তু দুই মাস বাদেই বিচ্ছেদ। রিকের সাথে বিয়ের বছরই কিডের সাথে বিচ্ছেদ ঘটান পামেলা। কিন্তু চার মাসের মাথাতেই ডিভোর্স।
কিড রক ছিলেন মিউজিশিয়ান। বিয়ের ৫৩ মিনিটের মাথাতেই নাকি পামেলার গায়ে হাত তোলেন কিড।
এর আগে মাত্র চারদিনের পরিচয়ে টমি লিকে বিয়ে করেছিলেন পামেলা অ্যান্ডারসন। সেই বিয়ে টেকে তিন বছর।
১১. কিম কার্দাসিয়ান-ক্রিস হামপ্রিস (স্থায়িত্ব- ১০ সপ্তাহ)
শুধু বিয়েতেই খরচ করেছিলেন ১০ মিলিয়ন ডলার। কাপড়চোপড় বাবদ খরচ হয়েছে আরও প্রচুর অর্থ। কিম কার্দাসিয়ানের জাকজমকপূর্ণ এই বিয়ের অনুষ্ঠান নিয়ে নির্মিত হয়েছিল ‘কিম ফেইরিটেল ওয়েডিং: এ কার্দাশিয়ান ইভেন্ট’ নামের দুই পর্বের টিভি অনুষ্ঠান। আর সে অনুষ্ঠান দেখেছে অন্তত ৩০ লক্ষেরও বেশি মানুষ।
অথচ শেষমেষ কী হলো? যত গর্জাল তত অত আর বর্ষাল না। মাত্র ৭২ দিন টিকেছে সে বিয়ে। বিচ্ছেদের কারণ- মতের অমিল।
বাস্কেটবল প্লেয়ার ক্রিস হামপ্রিসের সাথে বিচ্ছেদ নিয়ে কার্দাশিয়ানের মন্তব্য ছিল, “আমি আশা করি সবাই বুঝবেন সিদ্ধান্তটা সহজ ছিল না। আমিও আশা করেছিলাম বিয়েটা দীর্ঘস্থায়ী হবে। কিন্তু সব তো পরিকল্পনা মতো হয় না।”
এখন র্যাপার কেনি ওয়েস্টের ঘর করছেন কার্দাসিয়ান। সামনে তাদের সন্তানও হবে।
১২. লিসা মারি প্রিসলী-নিকোলাস কেজ (স্থায়িত্ব- ৩ মাস)
নিজের ২৫তম জন্মদিনে কেজকে বিয়ে করেছিলেন লিসা প্রিসলী। মাইকেল জ্যাকসনের সাথে নয় মাস দাম্পত্য জীবনের পর কেজের সাথে জড়িত হয়েছিলেন প্রিসলী। কিন্তু প্রথমটির চেয়েও দ্রুত ভেঙেছে দ্বিতীয় বিয়ে। তার মন্তব্য ছিল “এটা একটা ভুল।
লিজেন্ডারী সিঙ্গার এলভিসের মেয়ে লিসা। অভিনেতা কেজকে বিয়ে করেন ২০০২ সালের আগস্টে। হাওয়াই দ্বীপে করা এ বিয়েটা ছিল নিকোলাসের দ্বিতীয় আর লিসার তৃতীয় বিয়ে। ১০৭ দিন পরে কেজ জানান তাদের বিয়ে করা উচিত হয়নি। প্রিসলীর জন্য এটি ছিল তৃতীয় বিচ্ছেদ।
প্রথম স্বামীর সাথে ছাড়াছাড়ি হওয়ার ২০ দিনের মাথায় বিয়ে করেছিলেন পপ কিং মাইকেল জ্যাকসনকে। সে বিয়ে টেকে ২০ মাস।