ঝড় বইছে অনলাইন। সঙ্গে হচ্ছে রেকর্ডও। তবে এবারের ঝড় কিন্তু আলোচনার নয়। বরং সমালোচনার বৈরী ঝড়। মাত্র ২১ মিনিটের ব্যবধানে ৬৯ হাজার ফেসবুক বার্তা মুছে দিয়েছে ফেসবুক নিজেই।
কারণ ফেসবুকের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে গোপন তথ্য দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে করা মন্তব্যগুলো মুছতেই ফেসবুক নতুন করে সমালোচনার কাদায় পা মাড়িয়েছেন। সংবাদমাদ্যম সূত্র এ তথ্য দিয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্বের সেরা দুই সিইও মার্ক জুকারবাগ ও ল্যারি পেজ সমালোচনা তোপে পড়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে ‘প্রিজম’ নামে গোপন চুক্তির ভিত্তিতে এসব ব্যক্তিতথ্য অবলীলায় সরকারের হাতে তুলে দিচ্ছেন বলে অনলাইনজুড়ে খবর ছড়িয়ে পড়ে। এ খবরে গুগল এবং ফেসবুক গ্রাহকেরা ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। আর এসব প্রতিক্রিয়া মুছে ফেসবুক নিজেকে সন্দেহের তালিকায় নিয়ে গেছে।
এ অবস্থার প্রেক্ষিতে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ গ্রাহকদের উদ্দেশ্য জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে ফেসবুকের তথ্য বিনিময়ে কোনো ধরনের গোপন চুক্তি সই হয়নি। এদিকে গুগল একে ভিত্তিহীন একটি গুজব বলে অভিহিত করেছেন।
এ বিষয়ে গুগলের প্রধান আইনজীবী ডেভিড ড্রামমন্ড বলেন, সরকারকে তথ্য দেওয়ার এ প্রকল্প চুক্তি একেবারেই ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা। গুগল কোনোভাবেই গ্রাহকের তথ্য বিক্রি করে না।
বিখ্যাত দুই আন্তর্জাতিক সংবাদমাদ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট এবং দ্য গার্ডিয়ানে এ ধরনের তথ্য বিক্রির অভিযোগ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। এসব প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের নয়টি শীর্ষ প্রতিষ্ঠান সরকারকে অবাধে ব্যক্তিতথ্য দিচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়।
এসব অভিযুক্ত প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাইক্রোসফট, ইয়াহু, গুগল, ফেসবুক, পলটক, এওএল, স্কাইপি এবং অ্যাপল আছে।
অনলাইনে শুধু তথ্য বিক্রি নয়, এসব প্রতিষ্ঠানের সার্ভারে যুক্তরাষ্ট্র সরকার অবাধে প্রবেশ করে থাকেন বলেও সুস্পষ্ট অভিযোগ তোলা হয়েছে।
এ অভিযোগের বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে জুকারবার্গ বলছেন, এসব ভ্রান্ত ধারণা হিসেবে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াতেই কোনো বিশেষ মহল এ কাজটা করছে। ‘প্রিজম’ নামে কোনো গোপন চুক্তির কথা প্রথম শুনলাম। এ ধরনের মন্তব্যের সঙ্গে অ্যাপল কর্তৃপক্ষও একমত পোষণ করেছেন।
তবে এ অভিযোগের তীর সবচেয়ে বেশি বিদ্ধ করছে গুগল, ফেসবুক এবং এওএল প্রতিষ্ঠানকে। যদিও এদের সবাই এরই মধ্যে এ ধরনের গোপন চুক্তির সঙ্গে নিজেদের কোনো সম্পৃকত্তা নেই বলে জানিয়েছেন।
কিন্তু বিখ্যাত গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান প্রতিবেদনে প্রকাশ, এরই মধ্যে গত তিনমাস ধরে যুক্তরাষ্ট্রের টেলিকম অপারেটর ভেরিজন দেশটির ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সিকে গ্রাহকদের সব ধরনের তথ্য সরবরাহ করছে।
এদিকে জুকারবার্গ এবং ল্যারি পেজ বলছেন, অবশ্যই আমরা সরকারকে তথ্য দিয়ে থাকি। কিন্তু নিরাপত্তা এবং আইনি প্রশ্নেই সরকারকে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সহায়তা করা হয়। এর পেছনে কোনো ধরনের আর্থিক সুবিধার বিষয় জড়িত নয়।গুগল তার গ্রাহকদের প্রাইভেসি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং সতর্ক।
তবে একই অভিযোগ অভিযুক্ত টেলিকম অপারেটর ভেরিজনের প্রসঙ্গ টেনে জুকারবার্গ বলেন, ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সিকে অপারেটরদের চুক্তি আর আইসিটি প্রতিষ্ঠানগুলোর চুক্তির ধরণ এক নয়। এ জন্য তাদের তথ্যভিত্তিক আইনি নিরাপত্তা আর গুগল ও ফেসবুকে নিরাপত্তা আইনি কাঠামো মোটেও এক নয়।
তবে এসব প্রতিষ্ঠান যা-ই বলুক না কেন, গ্রাহকদের মনে এ নিয়ে দারুণ শঙ্কা আর অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। আর তা দূর করতে গুগল এবং ফেসবুককে যথেষ্ট বেগ পেতে হবে। এমনটাই মনে করছেন অনলাইন বিশ্লেষকেরা।