শুক্রবার, মে ১৭, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিনগণমাধ্যমের সামনে আসামী এনে বিপাকে সিএমপি

গণমাধ্যমের সামনে আসামী এনে বিপাকে সিএমপি

মা-মেয়ে হত্যার ‌আসামীদের গণমাধ্যমের সামনে হাজির করায় চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) কর্মকর্তাদের উপর ক্ষুব্ধ হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সদর দপ্তর থেকে সিএমপি কমিশনারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

গ্রেপ্তার হওয়া আসামীদের গণমাধ্যমের সামনে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান না করা এবং তাদের শরীরে কোন ধরনের স্টিকার না লাগানো বা না ঝুলানোর বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশ আছে। পুলিশ সদর দপ্তরের আইন শাখা থেকেও এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। এরপরও গণমাধ্যমের সামনে বুকে স্টিকার লাগিয়ে আসামীদের হাজির করে সিএমপি সেই নির্দেশনা লঙ্ঘন করেছে বলে মনে করছে পুলিশ সদর দপ্তর।

নগরীর ডবলমুরিং থানার আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকায় নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও রগ কেটে মা-মেয়েকে খুনের ঘটনায় গত ২৬ মার্চ আবু রায়হান (২৪) ও মো.শহীদ (২৪) নামে দু’জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

২৭ মার্চ সকালে নগর পুলিশ কমিশনার মো.শফিকুল ইসলাম খুনের রহস্য উন্মোচন নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সিএমপি কমিশনারের সম্মেলন কক্ষে রায়হান ও শহীদকে হাজির করা হয়। এসময় তাদের বুকে স্টিকার লাগানো ছিল এবং গণমাধ্যমের সামনে তারা খুনের বিষয়ে বিস্তারিত বক্তব্য দেন।

এরপর ১ এপ্রিল পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) মো.জালাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী এক ফ্যাক্সবার্তায় (স্মারক নং- মিডিয়া/৪৭৫) সিএমপি কমিশনারকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশ দেন। ২ এপ্রিল এ আদেশ সিএমপিতে এসে পৌঁছে। এরপর আজ (বৃহস্পতিবার) এ বিষয়ে সিএমপি সকল শাখাকে লিখিতভাবে সতর্ক করা হয়েছে।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) বনজ কুমার মজুমদার  বলেন, একটা ভুল হয়ে গেছে। আমরা সংশ্লিষ্ট সকলকে এ বিষয়ে সতর্ক করেছি। সতর্ক করার বিষয়টি পুলিশ সদর দপ্তরকে অবহিত করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাঠানো ফ্যাক্সবার্তায় আইন শাখা থেকে ২০১৩ সালের ১২ জানুয়ারি দেয়া আদেশের কপিও (আইন/রিট/২৬৫-২০১২/(বিবিধ)/১৫৯/৯৩) সংযুক্ত করা হয়। পুলিশ সদর দপ্তরের আইন কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত ডিআইজি (ডিসিপ্লিন এণ্ড প্রফেশনাল স্ট্যাণ্ডার্ড) মো.আলমগীর আলম ওই আদেশ জারি করেছিলেন।

মাদকসহ গ্রেপ্তারের পর এক বিচারককে বুকে স্টিকার লাগিয়ে গণমাধ্যমের সামনে হাজিরের ঘটনায় দায়ের করা এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর হাইকোর্ট এক আদেশ দেন।

আদেশে বলা হয়, আসামীকে গ্রেপ্তারের তথ্য জনসাধারণকে জানাতে সাংবাদিকদের তথ্য ও ছবি সরবরাহের ক্ষেত্রে পুলিশের জন্য কোন বাধা নেই। কিন্তু আসামীকে এমনভাবে বুকে স্টিকার ঝুলিয়ে বা লাগিয়ে গণমাধ্যমের সামনে হাজির করা যাবেনা বা আসামীর কোন ধরনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করা যাবেনা যাতে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে জনসাধারণ দোষী কিংবা দণ্ডিত ভাবেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগর পুলিশের এক কর্মকর্তা  জানান, আসামীদের বুকে স্টিকার না লাগানো এবং তাদের গণমাধ্যমের সামনে বক্তব্য দিতে না দেয়ার বিষয়ে সিএমপির শীর্ষ কর্মকতাদের কঠোর নির্দেশনা ছিল। কিন্তু গণমাধ্যম কর্মীরা ছবি তোলার সময় সেই নির্দেশনা অমান্য করে কিছু কনিষ্ঠ পুলিশ সদস্য তাদের মাঝে দাঁড়িয়ে যান।

আবার সংবাদ সম্মেলন শেষ করে সিএমপি কমিশনারসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা চলে যাবার পর গণমাধ্যম কর্মীরা তাদের বক্তব্য নিতে চাইলেও উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা তাদের বাধা দেননি।

গত ২৪ মার্চ সকালে নগরীর ডবলমুরিং থানার আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকার ১৭ নম্বর সড়কে যমুনা নামে একটি ভবনের চতুর্থ তলায় সিএণ্ডএফ ব্যবসায়ীর স্ত্রী রেজিয়া বেগম (৫০) এবং মেয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী সায়মা নাজনীন নিশাতকে (১৬) পায়ের রগ কেটে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

২৬ মার্চ গ্রেপ্তারের পর রায়হান জানায়, নিশাতের সঙ্গে রায়হানের এক বছর ধরে সম্পর্ক ছিল। কিন্তু এক পর্যায়ে নিশাত তাকে ছেড়ে মির্জা নামে আরেক ছেলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ায় তাকে খুন করা হয়। বাধা দেয়ায় নিশাতের মাকেও খুন করা হয়। গ্রেপ্তার হওয়া রায়হান পরবর্তীতে আদালতেও ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ