শুক্রবার, মে ৩, ২০২৪
প্রচ্ছদইন্টারভিউবিএনপির ওয়েবসাইটেই জিয়া সপ্তম রাষ্ট্রপতি, ওয়েবসাইট বন্ধ

বিএনপির ওয়েবসাইটেই জিয়া সপ্তম রাষ্ট্রপতি, ওয়েবসাইট বন্ধ

ষ্টাফ  রিপোর্টার  (বিডিসময়২৪ডটকম)

প্রথম’ রাষ্ট্রপতি নিয়ে ক’দিন ধরে টানা বিতর্কের প্রেক্ষাপটে বিএনপির ওয়েবসাইটটি বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত ওয়েবসাইটটিতে দলটির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত জিয়াউর রহমানকে সপ্তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে উল্লেখ করা ছিল।

কিন্তু সম্প্রতি সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও পরবর্তীতে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ দলের আর সব নেতা জিয়াউর রহমানকে দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি দাবি করেন। এ দাবির সঙ্গে ওয়েবসাইটটিতে দেওয়া তথ্যের চরম গরমিলে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে বিএনপি। এরই প্রেক্ষাপটে ওয়েবসাইটটি বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে দলীয় সূত্র।

মঙ্গলবার লন্ডনে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান দাবি করেন, তার পিতা জিয়াউর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের ‘প্রথম’ রাষ্ট্রপতি ও ‘স্বাধীনতার ঘোষক’। অনলাইনসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এ খবর পরিবেশিত হলে সমালোচনার ঝড় উঠে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ জাসদ সভাপতি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এবং প্রগতিশীল দল ও রাজনীতিকরা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ‘প্রলাপ’ বকছেন বলে বক্তব্য দেন। এরমধ্যে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশের রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে তারেকের মা বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াও দাবি করেন,  তার স্বামীই ছিলেন দেশের ‘প্রথম’ রাষ্ট্রপতি।

ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স (আইডিবি) মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের ওই অনুষ্ঠানে খালেদা বলেন, ‘তারা যতই বলুক, কিন্তু প্রকৃত ইতিহাস হচ্ছে, ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ ও ‘প্রথম রাষ্ট্রপতি’ জিয়াউর রহমান।’

বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপির নিজস্ব ওয়েবসাইটে (https://bangladeshnationalistparty-bnp.org) প্রবেশ করে দেখা যায়, দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে সপ্তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ওয়েবসাইটে দলটির প্রতিষ্ঠাকালীন ইতিহাসে দেখা যায়, (https://bangladeshnationalistparty-bnp.org/content.aspx?tablename=webitem2&id=9&child=null&parentid=null) বিএনপি ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশের সপ্তম রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান দ্বারা প্রতিষ্ঠিত দলটি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী দল।

এ নিয়ে শুক্রবার সকালে বাংলানিউজে ‘বিএনপির ওয়েবসাইটেই জিয়া সপ্তম রাষ্ট্রপতি’ শীর্ষক একটি সংবাদ পরিবেশিত হয়।  বহুল পঠিত সংবাদটি শনিবারও বাংলানিউজের বিশেষ আয়োজনে (শুক্রবারের বাংলানিউজ থেকে) রাখা রাখা হয়।  তবে শনিবার বিকেলে বিএনপির ওয়েবসাইটে ক্লিক করে তা আর খোলা যায়নি। এমনকি ওই সাইটেও আর প্রবেশ করা যায়নি।  https://bangladeshnationalistparty-bnp.org –শীর্ষক ঠিকানায় ক্লিক করে দেখা যায়, সেখানে কয়েকজন নারী-পুরুষের ছবি দেওয়া হয়েছে। তাতে লেখা রয়েছে ‘Ever Feel Like you’re in the wrong place?’

একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতে হানাদার পাকিস্তানি সামরিক জান্তা নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে বিশ্বের ইতিহাসের নৃশংসতম নারকীয় গণহত্যা চালায়। তারা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানে নিয়ে যায়। গ্রেফতার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে গেলে পুরো জাতি দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

এরপর ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ ও অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি, তাজউদ্দিন আহমেদকে প্রধানমন্ত্রী করে গঠিত স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী সরকার শপথ নেয়। ওই সরকারের নেতৃত্বে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন দেশ হিসেবে জায়গা করে নেয় বাংলাদেশ। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রথম রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান- এ কথা তাই ইতিহাসের অমোঘ সত্য।

অন্যদিকে খালেদা জিয়ার স্বামী মুক্তিযুদ্ধের সময়কার মেজর জিয়াউর রহমান ১ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক ছিলেন। পরে তিনি জেড ফোর্সের অধিনায়ক নিযুক্ত হন। ২৭ মার্চ তিনি স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রে বঙ্গবন্ধুর নামে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ক্ষমতার কেন্দ্রে আসেন জিয়াউর রহমান। সামরিক প্রশাসক থেকে পরে তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হন।

এ বিষয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান এই ইতিহাস ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে উপস্থাপন এবং বিএনপির নিজস্ব ওয়েবসাইটেই জিয়াউর রহমানকে সপ্তম রাষ্ট্রপতি উল্লেখ থাকায় ওয়েবসাইটি বন্ধ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে বিএনপির প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দলটির দপ্তর বিভাগের কথা বলার পরামর্শ দেন। জানতে চাইলে সন্ধ্যায় বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বে থাকা যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সাইটটি বোধহয় হ্যাকড হয়ে গেছে। আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি। তবে বিষয়টি নিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্য জানতে ফোন দেওয়া হলে চেয়ারপার্সনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল তা রিসিভ করেননি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ