বুধবার, মে ১, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিনপটিয়ায় কোথাও উৎসবমুখর ভোট, কোথাও নিষ্প্রাণ

পটিয়ায় কোথাও উৎসবমুখর ভোট, কোথাও নিষ্প্রাণ

চট্টগ্রাম অফিস (বিডি সময় ২৪ ডটকম)

দুপুর দেড়টা। কেলিশহর ইউনিয়নের দক্ষিণ কেলিশহর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, প্রার্থীর এজেণ্ট, কর্তব্যরত আনসার ও গ্রাম পুলিশের সদস্য, নিবার্চনী দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা এক জায়গায় বসে গল্পগুজব করছেন। পুরো কেন্দ্রজুড়ে ভোটারের দেখা নেই। অলস বসে আছেন নির্বাচনী কর্মকর্তারাও।

ভোটারের অভাবে খাঁ খাঁ করা এই ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার গোলাম রহমানের কাছে ভোটগ্রহণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনিও ভোটরের উপস্থিতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন। তিনি  বলেন, ‘একদম সকালের দিকে কিছু লোক এসেছিল। এরপর থেকে মাঝে মাঝে দু’একজন আসছেন।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ ইছহাক  বলেন, এলাকার লোকজন খেটে খাওয়া মানুষ। অনেকে কাজে চলে গেছেন। অনেকে চাকুরিতে ছুটি পাননি, শহর থেকে আসতে পারেননি। গত সংসদ নির্বাচনের প্রভাবও পড়েছে। মানুষ ভাবছে ভোট দিয়ে লাভ কি ?’

কেলিশহরের মত পটিয়া উপজেলার জিরি, পিঙ্গলা, আমির ভাণ্ডার, পৌরসভা, সুচক্রদণ্ডীসহ আরও বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে গিয়ে কোথাও নিস্প্রাণ আর কোথাও উৎসবমুখর পরিবেশ দেখা গেছে। তবে অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রেই ভোটরের সারি তেমন দেখা যায়নি।

সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিচিতি আছে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার। কিন্তু সংখ্যালঘুদের আধিক্য আছে এমন বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে হিন্দু, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজনকে তেমনভাবে ভোটকেন্দ্রে যেতে দেখা যায়নি। বিপরীতে ভোটকেন্দ্রে ভোটকেন্দ্রে সরব উপস্থিতি দেখা গেছে বিএনপির নেতাকর্মীদের।

বেলা ১২টার দিকে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত সুচক্রদণ্ডী এলাকার সুচক্রদণ্ডী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানেও হাতেগোণা কিছু ভোটার আছেন। এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থক সমর খাস্তগীর জানালেন, সকাল থেকে অনেক চেষ্টা করেও তিনি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোটারদের কেন্দ্রে আনতে পারছেনা।

বরলিয়া ইউনিয়নের পূর্ব বরলিয়া ফোরকানিয়া মাদ্রাসার ভোটার শিবু দাশ  বলেন, আজ শিব চর্তুদশী। হিন্দু সম্প্রদায়ের নারীরা উপোস করেন। সেজন্য তারা ভোটকেন্দ্রে আসছেন না। এছাড়া জাতীয় নির্বাচনের পর হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে যেভাবে হামলা হয়েছে সেটারও প্রভাব পড়েছে।

বরলিয়ার ওই ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মো.ইউসুফ  জানান, দুপুর ১টা পর্যন্ত তার ভোটকেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৭’শর মত। ওই ভোটকেন্দ্রের মোট ভোটার এক হাজার ৯০৯।

দক্ষিণ কেলিশহর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রিজাইডিং অফিসার আব্দুল জলিল  জানান, তার কেন্দ্রে মোট ভোটার ২ হাজার ৭১৫ জন। দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ওই কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ১ হাজার ৮৭ ভোট।

পূর্ব পিঙ্গলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে নারী ভোটারের উপস্থিতি কম। তবে বিপুল সংখ্যক পুরুষ ভোটারের উপস্থিতিতে সরগরম ছিল ওই ভোটকেন্দ্র।

মো.নাছির নামে এক বিএনপি কর্মী সাংবাদিকদের দেখে বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে কি আপনারা এই চিত্র দেখেছিলেন ? কেন্দ্রে ভোটার আনতে পারি আমরাই।

জিরি ইউনিয়নের পূর্ব জিরি আমানিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মুজাফফর আহমেদ টিপু’র সমর্থকরা অটোরিক্সা, ইজিবাইকে করে ভোটারদের কেন্দ্রে আনছেন। উৎসবমুখর দেখা গেছে ওই কেন্দ্র।

জিরি ইউনিয়নের আল জামেয়াতুল আরবিয়াতুল ইসলামিয়া জিরি মাদ্রাসা কেন্দ্রে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা মাদ্রাসা থেকে বের হয়ে বিএনপি সমর্থক চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ভোট দেয়ার জন্য অনুরোধ করতে দেখা গেছে। ওই কেন্দ্রেও সরব বিএনপি নেতাকর্মীরা বিভিন্ন যানবাহনে করে ভোটারদের বিশেষত নারীদের কেন্দ্রে আনতে দেখা গেছে।

একই ইউনিয়নের সাঁইদাইর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় ভোটারশূন্য কেন্দ্রে বিএনপি সমর্থকরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের অনুরোধ করছেন কেন্দ্রে আসতে।

ওই ভোটকেন্দ্রের ভোটার পাপিয়া আক্তার বলেন, আনারস মার্কার (বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী টিপু) লোকজন বাড়িতে গেছে, বলছে একটা ভোট দিতে আসার জন্য। সেজন্য আসছি। না হলে কাজে চলে যেতাম।

তিনি বলেন, মানুষ ঘরে বসে আছে। কিন্তু ভোট দিতে আসছেনা। কিজন্য আসছেনা সেটা বুঝতে পারছিনা।

অধিকাংশ এলাকায় বিএনপি সমর্থকরা, তাদের সঙ্গে জামায়াত-হেফাজত সক্রিয় ভূমিকা পালন করলেও তেমনভাবে সরব দেখা যায়নি আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সমর্থকদের।

এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পটিয়ায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, সমর্থকরা কয়েক ভাগে ভাগ হয়ে গেছেন। প্রার্থীদের মধ্যে কোন্দলের প্রভাব পড়েছে নেতাকর্মীদের মধ্যে।

উল্লেখ্য পটিয়ায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ সমর্থন দিয়েছে কাপ-পিরিচ মার্কার প্রার্থী নাছির আহমেদকে। তবে সেই সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে প্রার্থী হয়েছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান তিমির বরণ চৌধুরী। বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় তিমির বরণকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়।

ভোটার উপস্থিতি যা-ই হোক, বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া পটিয়ায় কারচুপির কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। প্রার্থীদের মধ্য থেকেও কেউ কোন অভিযোগ আনেননি।

বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্যে বৃহস্পতিবার সকালে হেফাজতের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত জিরি মাদ্রাসায় হেফাজতে ইসলাম ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। অন্যদিকে সুচক্রদন্ডী এলাকায় একটি কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের দু’প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে এবং পূর্ব কচুয়াই এলাকায় একটি কেন্দ্রে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

পটিয়া উপজেলার ২২ টি ইউনিয়নের ১৩০ টি ভোটকেন্দ্রে মোট ভোটার ৩ লক্ষ ৪৬ হাজার ৪৩৮ জন। নির্বাচনে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ১৮ জন করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়। সকাল ৮টা থেকে শুরু হওয়া ভোটগ্রহণ শেষ হয় বিকেল ৪টায়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ