মহাজোট সরকারের শেষ বাজেট জাতীয় সংসদে ২০১৩-১৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত পেশ করেছেন।
এবারের বাজেটের আকার ২ লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে এক লাখ ৬৭ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকার রাজস্ব প্রাপ্তির আশা করছে সরকার। এরমধ্য থেকে আসবে এক লাখ ৪১ হাজার ২১৯ কোটি টাকা, করবহির্ভূত রাজস্ব থেকে ২৬ হাজার ২৪০ কোটি টাকা। এ বাজেটের সামগ্রিক ঘাটতির পরিমাণ ৫৫ হাজার ৩২ কোটি টাকা।
মন্ত্রী আশা করেন, আগামী অর্থবছরে বিদেশি অনুদান থেকে ৬ হাজার ৬৭০ কোটি এবং ঋণ থেকে ১৪ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা পাবে সরকার। ঘাটতি অর্থায়নে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে আগামী অর্থবছরে ২৫ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার প্রাক্কলন করা হয়েছে। এর ফলে বাজেটে ঘাটতি দাঁড়াচ্ছে ৫৫ হাজার ৩২ কোটি টাকা। অর্থাৎ মোট দেশজ উত্পাদনের তুলনায় ঘাটতি ধরা হয়েছে ৪.৬ %।
চলতি অর্থ-বছরের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৬.৩-৬.৮ % হতে পারে আর আগামী অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭.২ %।
বেলা ৩টায় ১৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনার সঙ্গে অর্থমন্ত্রী অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করেন। পরে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতা শুরু করেন। বিরোধীদল বিএনপি এ অধিবেশনে উপস্থিত নেই।
এর আগে সংসদ ভবনে মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন দেয়া হয়।
অর্থমন্ত্রীর বিরাট ব্যয়ের বাজেটের মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ধরা হয়েছে ৬৫ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা। আর বাকি এক লাখ ৫৬ হাজার ৬২১ কোটি টাকার অনুন্নয়ন-ব্যয় নির্ধারণের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। শতকরা হিসাবে এডিপি হচ্ছে মোট দেশজ উত্পাদনের (জিডিপি) ৫ দশমিক ৫%। আর অনুন্নয়ন-ব্যয় জিডিপির ১৩.২%।
বাজেট নিয়ে অর্থনীতিবিদদের ধারনা
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) জন্য ৭৩ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তবে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে দুই প্রধান জোট সমঝোতায় আসতে না পারলে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার জেরে বাজেট বাস্তবায়ন কঠিন হবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
অব্যাহত রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিরোধীদলের হরতালে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য এক নাজুক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আর অর্থনীতিতে এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে। কর আদায়সহ বিভিন্ন খাতে কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত হয়নি। এ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা হচ্ছে।
গত বছরের ৭ জুন বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী। বেশ উচ্চাশা নিয়েই মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭.২% নির্ধারণ করা হয়। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ১২ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা ধরা হয়। কিন্তু সব উচ্চাশাই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার জেরে ফিকে হতে শুরু করে। রাজনৈতিক অস্থিরতায় পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে এবং স্থল ও সমুদ্রবন্দরের কার্যক্রমে ছেদ পড়ে। একইসঙ্গে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ কমতে শুরু করে।
২০১৩-১৪ অর্থবছরের জন্য এরইমধ্যে এডিপি ঘোষণা করেছে সরকার। স্বায়িত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব অর্থায়নসহ এর আকার ধরা হয়েছে ৭৩ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। তবে প্রকৃত এডিপি ৬৫ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। সমাপ্ত প্রায় অর্থবছরের বাস্তবতায় নতুন এডিপি বাস্তবায়ন নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা।
এছাড়া বাজেট ঘাটতি থাকছে প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা যা জিডিপি ৪.৮ শতাংশ। আর ঘাটতি মোকাবেলায় ব্যাংক থেকে ২৫ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। একইসঙ্গে বৈদেশিক সাহায্য পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রাও বাড়ানো হয়েছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকলে বাজেট ঘাটতি বাড়তে পারে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।
বরাবরের মতো এবারো বাজেটে কালো টাকা সাদা করার পাশাপাশি ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো হবে বলে জানা গেছে। একইসঙ্গে কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ উন্নয়ন পরিকল্পনাও রয়েছে।
গত ৩ বারের মতো এবারো ডিজিটাল পদ্ধতিতে অর্থাৎ পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে বাজেট উপস্থাপন করছেন অর্থমন্ত্রী।