আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে হাটহাজারী ও মিরসরাইয়ে দলের একক প্রার্থী নির্ধারণে এখনও আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি বিএনপি। দুই উপজেলায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে একাধিক প্রার্থী মনোনয়নপত্র নেয়ায় দলীয়ভাবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হিমশিম খাচ্ছে কেন্দ্র নির্দেশিত একক প্রার্থী মনোনয়নের জন্য গঠিত কমিটি।
এদিকে দল থেকে একক প্রার্থী নির্ধারণের জন্য গঠিত কমিটির প্রধান বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান নেতাদের ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিষয়টি স্বীকার করে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান গতকাল বলেন, ‘দুই উপজেলায় আমাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। চেষ্টা করছি, একক প্রার্থী দেয়ার জন্য। কিন’ সেটা খুব সহজে হয়ে উঠছে না।’
তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে দলীয় প্রার্থী নির্ধারণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। কেউ কেউ এটা মানতে নারাজ। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের যেহেতু আরও সময় আছে, তাই আমরা অব্যাহত চেষ্টা চালাচ্ছি যেকোনো মূল্যে একক প্রার্থী দিতে। আমি নিজেও এ ব্যাপারে দলের স্বার্থে নেতাদের অনুরোধ করছি।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যে করেই হোক একক প্রার্থী নির্ধারণে আমরা আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেবো। কেউ যদি এ সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করে, তাহলে সাংগঠনিকভাবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস’া নেয়া হবে।’
তবে দুই উপজেলায় ইউনিয়ন-ওয়ার্ডের সভাপতি-সেক্রেটারির গোপন ভোটের ভিত্তিতে দলীয় প্রার্থী অনেকটা চূড়ান্ত করে ফেলেছে স’ানীয় জেলা বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা। কিন’ দলীয় প্রার্থী মনোনয়নে এ পদ্ধতি মানতে নারাজ গোপন ভোটে ছিটকে পড়া প্রার্থীরা। তাদের অভিযোগ, প্রার্থী র্নিধারণে দায়িত্বশীল নেতারা তাদের পছন্দের নেতাকর্মীদের মতামত নিয়েছেন। দলের অধিকাংশ তৃণমূল নেতাকর্মীর মতামতের প্রতিফলন ঘটেনি এতে।
ইতোমধ্যে দুই উপজেলা হাটহাজারী ও মিরসরাই বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা স’ানীয় তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে দলীয় প্রার্থী অনেকটা চূড়ান্ত করে ফেলেছেন।
উত্তর জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও হাটহাজারী উপজেলার সভাপতি এসএম ফজলুল হকের নেতৃত্বে সেখানকার ১৫টি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়নে গোপন ভোট নেওয়া হয়। এতে চেয়ারম্যান পদে মনোনীত হয়েছেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলম চৌধুরী।
হাটহাজারী উপজেলা চেয়ারম্যান পদে মাহবুবুল আলম চৌধুরী ছাড়া বিএনপির আরও দুই প্রার্থী রয়েছেন। এরা হলেন, মো. নাজিম উদ্দিন ওরফে ভিপি নাজিম ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনের এপিএস শোয়েব মোর্শেদ ফারুকী।
মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘দলের প্রার্থী বাছাইয়ে পছন্দের নেতাকর্মীদের থেকে গোপনে এ ভোট নেয়া হয়েছে। এতে হাটহাজারীর বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের সকল তৃণমূল নেতাকর্মীর মতামতের প্রতিফলন ঘটেনি। তাই আমি এ সিস্টেম মানি না। দল থেকে প্রার্থী নির্ধারণে কেন্দ্র নির্দেশিত গঠিত কমিটি যে সিদ্ধান্ত নেবে আমি তা মেনে নেবো।’
ভিপি নাজিমের মতো একই মত ব্যক্ত করেন বিএনপি থেকে আরেক চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক প্রতিমন্ত্রী মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনের এপিএস শোয়েব মোর্শেদ ফারুকী।
অন্যদিকে মিরসরাইতেও গত তিনদিন আগে সেখানকার স’ানীয় দায়িত্বশীল বিএনপি নেতা ও উত্তর জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি প্রফেসর এম কামাল উদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামত নিয়ে চেয়ারম্যানও ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী বাছাই করা হয়েছে। উপজেলার বারইয়ার হাট পৌরসভার সাবেক মেয়র জালাল উদ্দিনকে চেয়ারম্যান আর ভাইস চেয়ারম্যান পদে বাছাই করা হয়েছে কইয়াছড়া ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক মো. মহিউদ্দিনকে।
চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র নেয়া আরেকজন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন পছন্দের তৃণমূল নেতাকর্মীদের থেকে মতামত নেয়ার বিষয়টি মানছেন না।
তিনি বলেন, ‘এটা গঠনতন্ত্র মোতাবেক হয়নি। পছন্দের নেতাকর্মীদের থেকে তারা এ মতামত নিয়েছে। এটা আমি মানি না। কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রামে প্রার্থী নির্বাচনের জন্য যে কমিটি করা হয়েছে, তারাই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। ’