বৃহস্পতিবার, মে ৯, ২০২৪
প্রচ্ছদখেলার সময়২০১৩ সালের বাংলাদেশের ক্রিকেট

২০১৩ সালের বাংলাদেশের ক্রিকেট

স্পোর্টস ডেস্ক (বিডি সময় ২৪ ডটকম)

স্বীকার করা হউক বা না হউক বর্তমানে বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেট। দেশের ক্রিকেট ২০১৩ সাল ইতিবাচক-নেতিবাচক দুভাবেই স্মরণীয় হয়ে থাকবে । মাঠের লড়াইয়ে মুশফিকদের বছরটা ছিল জমজমাট। তবে মাঠের বাইরের লড়াই ভেতরের লড়াইকে কোনঠাসা করে ফেলেছিলো। লজ্জা, কলঙ্ক ও বিতর্কে ঘেরা ছিল এবছরটা দেশের ক্রিকেটকে ঘিরে। মার্চে শ্রীলঙ্কা সফর দিয়ে শুরু হয়েছিলো এবছরের প্রথম বিদেশ সফর।

নভেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে হোম সিরিজে দ্বিতীয়বারের মতো হোয়াইটওয়াশ করার পর শেষ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটপর্ব। বছরে মাত্র তিনটি সিরিজ হলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অর্জনের পাল্লাই ভারী। নিজেদের টেস্ট ইতিহাসের ১৩তম বছরে এসে মুশফিকুর রহীমের ব্যাটে বাংলাদেশ পেয়েছে প্রথম টেস্ট ডাবল সেঞ্চুরি, ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মিলে হয়েছে তিনটি বিশ্বরেকর্ড। জাতীয় দলে এসেছে সোহাগ গাজী, মুমিনুলদের মতো নতুন নতুন ম্যাচ উইনার। বিশ্ব র্স্পোটস মিডিয়ায় বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নতির কথা বারবার ফলাও করে প্রচার করে। এ বছর ছয় টেস্টের একটিতে জয়, দুটি হার ও তিনটি ড্র করেছে বাংলাদেশ। ৯ ওয়ানডের পাঁচটি জয়, তিনটি হার ও একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছে। ৪ টি-২০তে একটি জয় ও তিনটি হার রয়েছে। মোট কথা দেশের ক্রিকেটের সামগ্রিক ফলাফল নিশ্চিত উর্ধগামী। ফেব্রুয়ারিতে বিপিএলের দ্বিতীয় আসর দিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটের যাত্রা শুরু হয়। সেই বিপিএল থেকেই কলঙ্কের অধ্যায়ের অভিজ্ঞতা সঙ্গী হয় বাংলাদেশের। যা বিশ্ব মিডিয়ায়ও ফলাও করে প্রচার করা হয়। মোহাম্মদ আশরাফুলের হাত ধরে আসে সেই কলঙ্কের আঁচড়। সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে নিজের সম্পৃক্ততার স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। সব মিলিয়ে ২০১৩ সালে বড় অর্জনের সঙ্গে ছিল বড় কলঙ্কও। যা দেশের ক্রিকেটকে এক বড় ধাক্কা বলা চলে। সবচেয়ে নতুন টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়া বাংলাদেশের জন্য এটি এক নতুন অভিজ্ঞতা বলা চলে।

তারপরও সুখ-দুঃখ মিলে পার করেছে দেশের ক্রিকেট। এই প্রথম বাংলাদেশ সফরে এসে কোনো টেস্ট জিততে পারেনি কিউইরা। দুই টেস্ট ড্র হয়েছে। উল্টো চট্টগ্রামে প্রথম টেস্টে সেঞ্চুরি ও হ্যাটট্রিক করে বিরল বিশ্বরেকর্ড গড়েন সোহাগ গাজী। ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে এক টেস্টে সেঞ্চুরি ও হ্যাটট্রিকের এই বিশ্বরেকর্ড গড়েন পটুয়াখালীর ছেলে সোহাগ। তরুণ বাঁহাতি ব্যাটসম্যান মুমিনুল হক চিনিয়েছেন নিজেকে। চট্টগ্রাম টেস্টে ১৮১ রানের পর ঢাকায়ও সেঞ্চুরি করেছেন ব্যাট হাতে সৌরভ ছড়ানো কক্সবাজারের এই তরুণ। দীর্ঘদিন পর দেশের ক্রিকেট স্পিডি দুজন ক্রিকেটার পেয়েছে। টেস্ট সিরিজে চেপে বসা ভীতি ওয়ানডে সিরিজেও তটস্থ রাখে ব্ল্যাক ক্যাপসদের। ৩-০ তে নিউজিল্যান্ডকে  হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ বছর শেষ করে। প্রথম ওয়ানডেতে হ্যাটট্রিক করেছেন পেসার রুবেল হোসেন। সাকিব, তামিমদের মতো তারকা ক্রিকেটার ছাড়াও সিরিজ জেতা সম্ভব; যার পরিপূর্ণ প্রমাণই ছিল ২০১৩ সালের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। এটার প্রমাণও দিয়েছেন বাকি ক্রিকেটাররা। এর ফলে যারাই জাতীয় স্কোয়াডে যোগ দেবার সুযোগ পাবেন তারা আর খামখেয়ালিপূর্ণ আচরণ করবেন না।

ইনজুরি জর্জরিত বাংলাদেশ জাতীয় দল মার্চে গিয়েছিল শ্রীলঙ্কা সফরে। গলে প্রথম টেস্টেই শ্রীলঙ্কা সফরে হারের শঙ্কায় যখন কাঁপছিলো বাংলাদেশ। তখন ভালভাবে ফিরে আসে মুশফিকরা। লঙ্কানদের ৫৭০ রানের জবাবে বাংলাদেশের ইনিংস হারের কল্পনা তখন অনেকের মনেই জেঁকে বসেছিল। মুশফিকের ব্যাটে শ্রীলঙ্কায় বাংলাদেশের ভিন্ন গল্প লেখা শুরু। দেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ম্যাচের ৪র্থ দিন ডাবল সেঞ্চুরি (২০০) করেন অধিনায়ক মুশফিক। এছাড়া নাসিরের ১০০ রানে প্রথম ইনিংসে ৬৮৩ রান করে ৬৮ রানের লিডও পায় বাংলাদেশ। বেশ দাপটের সঙ্গেই গল টেস্ট ড্র করেছিল বাংলাদেশ। পরের টেস্ট হারলেও লঙ্কা সফরে ওয়ানডে সিরিজ ড্র করেছিল বাংলাদেশ সিরিজের তৃতীয় ম্যাচটি জিতে।

শ্রীলঙ্কা সফরের সাফল্যের দ্যুতি জিম্বাবুয়ের সামনে পড়ে অন্ধকারে তলিয়ে যায়। কেন জানি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আসলেই বাংলাদেশ হাত পা ছেড়ে দেয়। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে গত কয়েক বছরে এটাই হচ্ছে। প্রথম টেস্টে ৩৩৫ রানে হেরে যায় মুশফিকুর রহীমের দল। দ্বিতীয় টেস্টে জিতে সিরিজ হারের লজ্জা ঠেকায় বাংলাদেশ। ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার এই সিরিজে ওয়ানম্যান শো দেখিয়ে জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং লাইন কাঁপিয়েছেন পেস বোলার রবিউল ইসলাম। জিম্বাবুয়ে ভীতি ওয়ানডে সিরিজেও তাড়া করেছে বাংলাদেশ দলকে। ২-১ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজই হেরে যায় মুশফিক বাহিনী। হতাশায়, ক্ষোভে, দুঃখে ওয়ানডে সিরিজ হারের রাতেই অধিনায়ক পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন মুশফিকুর রহীম। টি-২০ জিতে সফর শেষ করে দেশে ফেরে বাংলাদেশ দল। নিছক আবেগের বশে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মুশফিক। পরে টিম ম্যানেজম্যান্টের সাথে পরামর্শ করে এই সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটেন তিনি। অক্টোবরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হোম সিরিজে নেতৃত্ব দিয়েছেন বাংলাদেশ দলকে। বছরের শেষ দিকে এসে ২০১৫ বিশ্বকাপ পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের অধিনায়কের দায়িত্বও উঠেছে মুশফিকের কাঁধে। এছাড়া ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় দলের হেড কোচের দায়িত্ব পাওয়া শেন জার্গেনসেনের মেয়াদ বাড়িয়েছে বিসিবি। ২০১৫ বিশ্বকাপ পর্যন্ত জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব পেয়েছেন এই অস্ট্রেলিয়ানও।

এতক্ষণ ছিলো এ দেশের ক্রিকেটের মাঠের খবর। এবার মাঠের বাইরে বিসিবি নির্বাচনও ছিল ক্রিকেটাঙ্গনে বড় আলোচনার খোরাক। বছরজুড়ে বিসিবি নির্বাচন নিয়ে ছিল বিতর্ক। কাউন্সিলর মনোনয়নসহ নির্বাচনী প্রক্রিয়ার প্রতি প্রশ্ন তুলে একটা পক্ষ নির্বাচনে অংশই নেয়নি। দেশের প্রতিটি ফেডারেশনের নির্বাচন এলেই ফোরাম খ্যাত নেতারা সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা আদায় করে নেয় বলে জানা যায়। এবারই বিসিবি নির্বাচনে তারা পিছু হঠেছিলো। পারেনি তারা। তারপরও ১০ অক্টোবর বিসিবি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় অনেকটা নিরুত্তাপভাবেই। প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে কিছুদিন সামনে ছিলেন সাবেক বিসিবি এবং এসিসি সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি। পরে আস্তে আস্তে তিনি নির্বাচন থেকে সরে যান। অনেকটা নিরুত্তাপ ভাবেই কোন প্রতিদ্বন্দ্বীতা ছাড়াই বিসিবি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনের প্রাপ্তি বলতে বিসিবি সভাপতি পদে নির্বাচন। যেখানে প্রথম নির্বাচিত সভাপতি হিসেবে বিসিবির মসনদে বসেন নাজমুল হাসান পাপন। নির্বাচিত হয়ে বোর্ড পরিচালক হয়েছেন জাতীয় দলের সাবেক তিন অধিনায়ক আকরাম খান, নাঈমুর রহমান দুর্জয় ও খালেদ মাহমুদ সুজন।

এছাড়া গোটা বছরজুড়েই দেশের ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থা বিসিবি হয়েছিল ঢাকার ক্লাবগুলোর ইচ্ছা-অনিচ্ছার ক্রীড়ানক। জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের না পাওয়ার অজুহাতে মার্চে নির্ধারিত সময়ে লিগ খেলতে রাজি হয়নি ক্লাবগুলো। এরপর টানা টালবাহানায় তা ক্রমেই দীর্ঘায়িত হয়। অথচ এই লিগ দেশের সিংহভাগ ক্রিকেটারের আয়ের উৎস। মে মাসে ক্রিকেটাররা বিসিবির সামনে লিগ চালুর দাবিতে অবস্থান ধর্মঘটই করে বসেন। জুনে লিগ বর্জনের হুমকিও দেয় ক্রিকেটাররা। অতঃপর সব উদ্দেশ্য হাসিলের পর সেপ্টেম্বরে মাঠে গড়ায় ২০১২-১৩ ক্রিকেট মৌসুমের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ। তার আগে ক্রিকেটারদের গলায় পারিশ্রমিকের লাগাম পরিয়ে দেয় বিসিবি ক্লাবগুলোর ইচ্ছা বাস্তবায়নের মিশনে নেমে। প্লেয়ার বাই চয়েজ দলবদল পদ্ধতির এই লিগে শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন হয় গাজী ট্যাংক ক্রিকেটার্স (লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ)। প্রথম বিভাগে অবনমিত হয়েছে ক্রিকেট কোচিং স্কুল (সিসিএস)। এর মাঝেও হয়েছে একটি  বিশ্বরেকর্ড। ১৭ সেপ্টেম্বর বগুড়ায় প্রাইম দোলেশ্বরের পক্ষে লিস্ট ‘এ’ (ওয়ানডে ম্যাচ) ক্রিকেটে ৪র্থ উইকেট জুটিতে বিশ্বরেকর্ড গড়েন মুমিনুল হক ও শ্রীলঙ্কান রোশান শিবাঙ্কা সিলভা। আবাহনীর বিপক্ষে ৪র্থ উইকেট জুটিতে ২৭৬ রানের জুটি গড়েন তারা। প্রাইম দোলেশ্বর ম্যাচটি জেতে ৫৮ রানে। বরাবরের মতো দেশের একসময়কার অন্যতম দর্শক পুষ্ঠ ক্লাব আবাহনীর অবস্থা এবারও ছিলো কাহিল। তেমনি মোহামেডানও তার অতীত ঐতিহ্যের সাথে মিলছে না। তাই নতুন নতুন ক্লাবগুলো এখন দেশের ক্রিকেটে ভালো অবস্থানে চলে আসছে।

আইসিসির নবতর সংস্করণ টি-টোয়েন্টি সারা বিশ্বেই অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হয়ে দাড়িয়েছে। এর ফলে অনিয়ম দুর্নীতি এসবেই বাসা বেধেছে। বিপিএল এর প্রথম আসর নিয়েই নানা কথা ক্রীড়া সাংবাদিকদেও কানে আসছিলো। ক্রিকেটকে জুয়ার আসর হিসেবে অনেকে আখ্যায়িত করলেও বিসিবির কর্তারা বড় মুখ করে তা এড়িয়ে গেছেন। কিন্তু ভিতরে ভিতরে ঠিকই ফিক্সিং বিষ দেশের ক্রিকেটের গভীরে প্রবেশ করেছে। ফেব্রুয়ারিতে বিপিএলের দ্বিতীয় আসর শেষ হয়। জিম্বাবুয়ে সফর থেকে বাংলাদেশ দল ঢাকায় ফেরার পর মে মাসে দেশের একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ফিক্সিং বোমার আদ্যোপান্ত। আইসিসির দুর্নীতি দমন বিভাগের (আকসু) কাছে ফিক্সিং পাপের কথা স্বীকার করেন দেশের ক্রিকেটের প্রথম সুপার হিরো আশরাফুল। এ খবরে মে মাসে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত বেগে। বিপিএল চ্যাম্পিয়ন ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরসের কর্ণধাররসহ আগস্টে আকসু ৯ জনকে অভিযুক্ত করে শাস্তির রূপরেখা দাখিল করে। অভিযুক্তদের মধ্যে আশরাফুল দোষ স্বীকার করলেও বাকিরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। বাকি আট জন হলেন মোশাররফ হোসেন রুবেল, মাহবুবুল আলম রবিন, মোহাম্মদ রফিক, ড্যারেন স্টিভেন্স, কৌশল্য লুকুয়ারাচ্চি, সেলিম চৌধুরী, শিহাব চৌধুরী ও গৌরব রাওয়াত। সাময়িক নিষিদ্ধ হন আশরাফুল, মোশাররফ ও রবিন। অনেক চড়াই-উতরাই শেষে নভেম্বরে অভিযুক্তদের ফিক্সিং পাপের শাস্তি দিতে বিসিবি গঠন করে বিশেষ দুর্নীতি দমন ট্রাইব্যুনাল। প্রাক্তন বিচারপতিকে প্রধান করে এই ট্রাইব্যুনাল যেখানে অভিযুক্তদের বিচার চলছে। এছাড়া বিপিএলে খেলা ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক না দেয়া, ফ্র্যাঞ্চাইজিদের সঙ্গে বিসিবির লুকোচুরি চলেছে বছরজুড়ে।

মোটকথা ভালোমন্দ মিলিয়ে বছর কেটে যাচ্ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটের। বছর শেষ প্রান্তে এসে আরেকবার বিশ্বরেকর্ডের স্বাদ পেল বাংলাদেশ। টি-২০ বিশ্বকাপের প্রস্তুতিমূলক বিজয় দিবস টি-২০ টুর্নামেন্টে পেসার আল-আমিন গড়লেন বিশ্বরেকর্ড। ২৬ ডিসেম্বর সিলেট বিভাগীয় স্টেডিয়ামে আবাহনীর বিপক্ষে হ্যাটট্রিকসহ এক ওভারে ৫ উইকেট নেন ইউসিবি বিসিবির পেসার আল-আমিন। চার বলে চার উইকেটও নিয়েছেন তিনি, যা টি-২০ ক্রিকেটে বিশ্বরেকর্ড। আর এক ওভারে ৫ উইকেট নেয়াও বিশ্বরেকর্ড। তবে ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটে এক ওভারে ৫ উইকেট নেয়া প্রথম বোলার আল-আমিন।

এদিকে আকরাম খান বিসিবি নির্বাচনে যাওয়ার পর থেকেই জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক পদটি শূন্য ছিল। ফারুক আহমেদের সঙ্গে এই পদের জন্য আলোচিত ছিল মিনহাজুল আবেদীন নান্নুর নাম। কিন্তু বেশিরভাগ বোর্ড পরিচালকের আশীর্বাদধন্য হয়ে ডিসেম্বরে দ্বিতীয় মেয়াদে জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক পদে নিয়োগ পান ফারুক আহমেদ। এর আগে ২০০৩ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত জাতীয় দলের নির্বাচক ছিলেন জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক। পরে নান্নু সরে যাবার ঘোষণা দেন।
এর আগে ২০১২ সালে ফিক্সিং পাপের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিল বাংলাদেশ আম্পায়ার নাদির শাহর মাধ্যমে। ভারতীয় এক টিভির গোপন ক্যামেরার ফাঁদে পড়েছিলেন নাদির শাহ। ম্যাচ পাতাতে রাজি হয়েছিলেন এই আম্পায়ার। ২০১৩ সালের মার্চে অপরাধের শাস্তি পেয়েছেন তিনি। ১০ বছরের জন্য নাদির শাহকে নিষিদ্ধ করে বিসিবি।
এবার দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে কলঙ্কজনক ঘটনাটি হল ওয়েস্ট ইন্ডিজের অনুর্ধ্ব-১৯ দলকে নিয়ে। চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের মাঝপথেই তার নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে দেশ ছাড়ে। চট্টগ্রামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের যুবাদের অবস্থানস্থলের কাছেই শক্তিশালী ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। এর আগে প্রথম ম্যাচ জিতে বাংলাদেশের যুবারা। এদিকে সামনে রয়েছে বাংলাদেশে শ্রীলঙ্কার সফর, এশিয়া কাপ এবং সবচেয়ে বড় টূর্ণামেন্ট টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। যা আগামী বছর জানুয়ারী থেকে এপ্রিলের ভেতর অনুষ্ঠিত হবে। বছরের শেষ প্রান্তে এসে দেশের ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি খুব ভয়াবহ অবস্থায় চলে যাচ্ছে। এই অবস্থায় আগামী বছরে দেশের সুনাম বৃদ্ধিকারী প্রতিযোগিতাগুলো দেশের মাটিতে হওয়া নিয়েই অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া এসব টূর্ণামেন্ট আয়োজন করা এককথায় অসম্ভব। ইতিমধ্যে পাকিস্তান না আসার কথা বলছে। শ্রীলঙ্কাও নতুন করে চিন্তা ভাবনা করছে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অন্যত্র সরিয়ে নেবার কথা শোনা যাচ্ছে। ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা সহ বিশ্বের বিভিন্ন টেস্ট খেলুড়ে দেশ এ ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তাই সময় এসেছে রাজনৈতিক সমঝোতা। ইতিমধ্যে বিসিবি সভাপতি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম জিয়ার সাথে সাক্ষাতের সুযোগ চেয়েছেন। এখন একমাত্র অবলম্বন সবার সন্মিলিত প্রয়াস। এছাড়া আর কোন পথ খোলা নেই। এব্যাপারে এসিসি সভাপতি সাবেক বিসিবি সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও একমত। তিনি সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করছেন। আগামী ৪ জানুয়ারী কলম্বোতে ঠিক করা হবে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত ফয়সালা। আশা করা যাচ্ছে সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। চলতি বছর ক্রিকেটে দেশের যে সাফল্য তা আগামী বছর আরো বিস্তৃত হবে এটা দেশের ক্রিকেটামোদি মহলের আশা। তবে তার আগে প্রয়োজন রাজনৈতিক সমঝোতা। এটা না হলে আর এর ফলে ক্রিকেটের সেরা সেরা প্রতিযোগিতা অন্যত্র স্থানান্তরিত হলে একদিকে যেমন সরকারী দলের সুনাম  ক্ষুণ্ন হবে তেমনি বাংলাদেশী হিসেবে বিরোধী দলও বাদ যাবে না। সর্বোপরি দেশের সুনাম মারাত্নকভাবে ক্ষুণ্ন হবে। এটা কোন অবস্থাতেই মানা যায় না। আশাকরি আগামী বছর তা হবে না।  দেশের ক্রিকেটের সুনাম অব্যাহত থাকবে বছরের পর বছর জুড়ে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ