রবিবার, মে ১৯, ২০২৪
প্রচ্ছদইন্টারভিউ২৬ ডিসেম্বর থেকে সেনাবাহিনী মোতায়েন

২৬ ডিসেম্বর থেকে সেনাবাহিনী মোতায়েন

ষ্টাফ  রিপোর্টার  (বিডিসময়২৪ডটকম)

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নিরাপত্তা বিধানে ২৬ ডিসেম্বর থেকে সেনাবাহিনী মোতায়েন হবে। এর তিনদিন আগে সেনাবাহিনীর শীতকালীন মহড়া শেষ হবে। মহড়া শেষে তারা ব্যারাকে ফিরবেন। এর পর তারা মাঠে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন। আজ নির্বাচন কমিশনে বিভিন্ন বাহিনীর প্রতিনিধি এবং রিটার্নি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ কথা জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদ। তিনি জানান ২৬ ডিসেম্বর মোতায়েনের পর সেনাবাহিনী থাকবে ভোটের পর আরও চারদিন ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত।

নির্বাচন কমিশনার মো. আবু হাফিজ  বলেন, ‘প্রতি বার-ই নির্বাচনের ১০-১২ দিন আগে মাঠে সেনা মোতায়েন করা হয়। এবার সহিংস পরিস্থিতে আরো আগেই নামাতে চেয়েছিলাম। তবে সেনাবাহিনীদের শীতকালীন মহড়া থাকায় সেটা সম্ভব নয়। শীতকালীন মহড়ার অংশ হিসাবে ইতিমধ্যে দু’একটি জেলা শহরে সেনাবাহিনী পৌঁছেছে বলে জানা গেছে। নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য তারা জেলা শহরগুলোতে অবস্থান নেবেন তারা।

নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ থেকে প্রথম দফায় ২৬ কোটি টাকার বরাদ্দ চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তিতে তা প্রায় দ্বিগুণ করে ৫৪ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। কারণ হিসেবে নির্বাচন কমিশনের উপ-সচিব মিহির সারোয়ার মোর্শেদ বলেন, ‘সাধারণত আইন শৃঙ্খলার উন্নতিতে বেশি সশস্ত্র বাহিনীর দরকার হয় না। তবে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হলে সশস্ত্র বাহিনীর সংখ্যা বাড়বে। এবং বেশি সময় তারা মাঠে অবস্থান করবে। সে ক্ষেত্রে তাদের বাজেটের পরিমাণ ও বেড়ে যাবে।’

ড.মহির সারোয়ার বলেন, নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ব্যায় হয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর খাতে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৬৫ কোটি টাকার বেশি খরচ হয়েছিল। এর মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীতেই খরচ হয়েছে সাড়ে ৯৭ কোটি ৭০ লাখ ৪৬ হাজার ১৪ টাকা। এবার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ক্ষেত্রে তার চেয়ে বেশি খরচ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেটা নির্ভর করবে কত দিন মাঠে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী থাকবে। এদিকে নির্বাচন কমিশনার মো. আবু হাফিজ বলেন, বর্তমানে বিরোধী দলের অবরোধে দেশে সহিংসতা বেড়েছে। এ কারণে আসা-যাওয়ার নিরাপত্তার জন্য পরিবহন খাতে বাজেট বেড়ে যাবে।

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনকালীন দায়িত্ব হিসেবে প্রতি জেলায় এক ব্যাটালিয়ান সেনা সদস্য স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে নিয়োগ করা হবে। আর প্রতিটি উপজেলা বা থানায় দুই থেকে চার প্লাটুন সেনা সদস্য নিয়োগ দেয়া হবে। তবে সেখানে ক্যাম্প না হলেও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন সেনা সদস্যরা। তবে নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের ভেতওে বা ভোটকক্ষে সেনা সদস্যরা থাকবে না। সশস্ত্রবাহিনী বেসমারিক প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী সহায়তা দেবে।

নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ সদস্য ও সশস্ত্র বাহিনীর ৫০ হাজার জোয়ান মিলিয়ে মোট ছয় লাখের বেশি সদস্য মোতায়েন করা হবে। ইসির তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯১ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত জাতীয় নির্বাচনে তিন থেকে পাঁচ দিন আগে সেনা মোতায়ন করা হতো। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশে জরুরি অবস্থা জারির পর আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী নামানো হয়েছিল। ২০০৮ সালের নির্বাচনের কিছুদিন আগে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহরের পর সেনাবাহিনী ব্যারাকে ফিরে যায়। পরে ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১২ দিনের জন্য সেনা মোতায়ন করা হয়েছিল।

সারাদেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে এবার নির্বাচানী মালামাল ও উপকারন সেনা সদস্যদের প্রহরায় পরিবহণের চিন্তাও করছে কমিশন। এ জন্য গত বুধবার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে দফায় দফায় বৈঠক ও করেছে কমিশন।

কার্যপত্র থেকে আরো জানাগেছে, ইসির পরিকল্পনা অনুযায়ী, মেট্রোপলিট্রন এলাকার বাইরে প্রতি সাধারণ ভোটকেন্দ্রের জন্য ১৫ জন, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ১৬ জন, মেট্রোপলিট্রন এলাকার ভেতরের সাধারণ ভোটকেন্দ্রের জন্য ১৭ জন, ঝুঁকিপূর্ণ ভোট্রকেন্দ্রের জন্য ১৮ জন করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। এছাড়া পার্বত্য, দ্বীপাঞ্চল ও হাওড় এলাকায় প্রতি সাধারণ ভোটকেন্দ্রে ১৭ জন ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৯ জন করে সদস্য মোতায়েন থাকবে। নির্বাচনী এলাকায় পুলিশ ভোটগ্রহণের আগে দুইদিন ও পরে একদিন মোতায়েন থাকবে। আনসার মোতায়েন থাকবে ভোটগ্রহণের আগে পরে মিলিয়ে পাঁচ দিন।

মোবাইল টিম ও স্ট্রাইর্কিং ফোর্স:

নির্বাচনী এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা রাক্ষার্থে স্ট্রাইর্কিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য সশস্ত্র বাহিনী, বিজিবি, কোস্ট গার্ড, র‌্যাব, আর্মড পুলিশ নিয়োগ করা হবে। ব্যাটলিয়ন আনসার সহযোগী ফোর্স হিসেবে পুলিশের সঙ্গে মোবাইল টিম হিসেবে কাজ করবে। বিজিবি ও কোস্ট গার্ড ৩ জানুয়ারি থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত নিয়োজিত থাকবে। এছাড়া র‌্যাব ও আমর্ড পুলিশ ১ জানুয়ারি থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত মোবাইল ও স্ট্রাইর্কিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে।

উল্লেখ্য, ইসি ঘোষিত তফসিল অনুসারে, ৫ জানুয়ারি হতে যাওয়া ১৪৬টি আসনের ভোটে মোট ভোটার সংখ্যা চার কোটি ৩৬ লাখ আট হাজার ৬৭০ জন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১৮ হাজার ১২৩টি। এর ১৫৪ আসনে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে ওই আসনগুলোয় আর ভোট লাগছে না।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ