পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এনআরবি কমার্শিয়াল (এনআরবিসি) ব্যাংকের একটি জালিয়াতির তদন্তে এর সাত উদ্যোক্তা-শেয়ারহোল্ডারকে শুনানীতে ডেকেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এদেরকে আগামী ১৩ জানুয়ারি, বেলা ২.৩০ এ বিএসইসি গঠিত তদন্ত কমিটির সামনে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) এ বিষয়ে বিএসইসি একটি আদেশ জারি করেছে। বিএসইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র অনুসারে, মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধে বাংলাদেশ ব্যাংক এনআরবিসি ব্যাংকের উদ্যোক্তা-শেয়াররহোল্ডার এমএ মান্নানের শেয়ার বাজেয়াপ্ত করেছিল। বিধি অনুসারে, বাজেয়াপ্ত শেয়ার কেনা-বেচার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু আব্দুল মান্নানের সঙ্গে যোগসাজশ করে ব্যাংকটির পর্ষদের অনুমতি ছাড়াই ওই শেয়ার ‘ব্লক মার্কেটে’র মাধ্যমে বাজারে বিক্রি করে দেওয়া হয়। আর বেআইনীভাবে এসব শেয়ার কিনে নেয় ব্যাংকটির বর্তমান চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল, নির্বাহী কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান আদনান ইমাম ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শহীদুল আহসানের মনোনীত ব্যক্তিরা। বিষয়টি তদন্তে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর বিএসইসি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই তদন্তের প্রয়োজনে ব্যাংকটির ৭ উদ্যোক্তা-শেয়ারহোল্ডারকে শুনানীতে ডাকা হয়েছে।
যাদেরকে শুনানীতে ডাকা হয়েছে, তারা হলেন- এনআরবিসি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার ফরাসত আলী, ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী, মোঃ এনায়েত হোসেন, সারওয়ার জামান চৌধুরী, ইজাহারুল ইসলাম হালদার, শাখাওয়াত আলী, তোহেল আহমেদ ও সেলিনা ইসলাম।
তদন্ত কমিটি গঠন সংক্রান্ত বিএসইসির প্রজ্ঞাপন অনুসারে, মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক এনআরবিসি ব্যাংকের উদ্যোক্তা-শেয়ারহোল্ডার এমএ মান্নানের ৪ কোটি ৭০ লাখ ১ হাজার ৮৮৬টি শেয়ার বাজেয়াপ্ত করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, এনআরবিসি ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাকালে এমএ মান্নানের নামে যে শেয়ার বরাদ্দ করা হয়, তার মূল্য তিনি পরিশোধ করেননি। অন্য এক ব্যক্তি তার হয়ে টাকা জমা দেন। আবার পরবর্তীকালে ব্যাংকটি যে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, ওই লভ্যাংশের অর্থও এমএ মান্নানের একাউন্টে জমা হয় নি। অন্য এক ব্যক্তি তার হয়ে ওই টাকা তুলে নিয়েছেন। পুরো বিষয়টি সন্দেহজনক এবং মানি লন্ডারিংয়ের ইঙ্গিতপূর্ণ।
জানা যায়, ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে আইন বহির্ভূতভাবে এমএ মান্নানের বাজেয়াপ্ত ওই শেয়ার ব্লক মার্কেটে বিক্রি করে দেওয়া হয়। ওই শেয়ারের মধ্যে ৪ কোটি ৪৯ লাখ ৯৯ হাজার ৫১১টি শেয়ার কিনে নেন ব্যাংকটির বর্তমান চেয়ারম্যান এস এম পারভেজ তমালের ব্যবসায়িক অংশীদার ও আত্মীয় শফিকুল আলম মিথুন, ব্যাংকটির নির্বাহী কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আদনান ইমামের স্ত্রী নাদিয়া মোমিন ইমাম ১ কোটি ৩৮ লাখ ৪৫ হাজার ৯০৪টি শেয়ার এবং মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শহীদুল আহসানের মেয়ে রেহনুমা আহসান ১ কোটি ৪৫ লাখ ৮০ হাজার ৬১৫টি শেয়ার কিনে নেন।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত যে কোনো কোম্পানির স্পন্সর শেয়ার বিক্রি করতে হলে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। কিন্তু এমএ মান্নানের নামে থাকা ও পরবর্তীতে বাজেয়াপ্ত ঘোষিত ৪ কোটি ৭০ লাখ শেয়ার বিক্রির বিষয়ে এনআরবিসি ব্যাংকের পর্ষদের কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এমনকি পর্ষদের কোনো সভায় এ নিয়ে কোনো আলোচনা পর্যন্ত করা হয়নি। পর্ষদকে অন্ধকারে রেখেই পারভেজ তমাল ও আদনান ইমাম গং এম এ মান্নানের সঙ্গে যোগসাজশ করে আইনবহির্ভূতভাবে ওই শেয়ার বিক্রির ব্যবস্থা করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ বিষয় এনআরবিসি ব্যাংকের কয়েকজন উদ্যোক্তা-শেয়ারহোল্ডার বিএসইসির কাছে অভিযোগ করলে বিএসইসি বিষয়টি খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নেয়।