বুধবার, ডিসেম্বর ১১, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিনসাধারণের সেবা আগে দিতে হবে : সেমিনারে অভিমত

সাধারণের সেবা আগে দিতে হবে : সেমিনারে অভিমত

প্রতিদিন সরকারি অফিসে প্রভাবশালী, মধ্যম পর্যায়ের বা খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষজন সেবা নিতে আসে। এদের মধ্যে প্রভাবশালী বা মধ্যম পর্যায়ের লোকজন কাংখিত সেবা যেকোন ভাবে আদায় করে নেয়। সেবা না পেলে সে উর্ধ্বতনের কাছে গিয়ে হলেও তার অধিকার প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু গ্রামের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ সেবা না পেলে খুবই হতাশ হয়। না জানার কারনে সে উর্ধ্বতনের নিকট যেতে পারেনা। প্রভাব দেখিয়েও তার অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারেনা। এসব সাধারণ মানুষের জন্যই সরকারি অফিসে সেবা প্রদান প্রতিশ্রæতি বা সিটিজেন চার্টারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এর মাধ্যমে কোন সেবা সে কত দিনের মধ্যে কিভাবে পাবে বা সেবাটির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বিষয়ে সে জানতে পারছে। কাংখিত সেবাটি নিতে পারছে। তাই সরকারি কর্মচারীদের কর্তব্য হবে সবার প্রথমে অসহায় সাধারণ মানুষটির সেবা আগে দেওয়া, তার পাশে দাঁড়ানো।
বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় চট্টগ্রাম আয়োজিত সিটিজেন চার্টার বিষয়ক সেমিনারে আজ সভাপতির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ নুরুল্লাহ নূরী। সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এ সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা।
প্রবন্ধে বলা হয়-সিটিজেন চার্টার হচ্ছে নাগরিকদের সেবাদান বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক অঙ্গীকার। এর মাধ্যমে যেকোন সরকারি দপ্তর সেবাদানের বিষয়টি নাগরিকদের সামনে তুলে ধরে। দৃশ্যমান জায়গায় প্রদর্শন করে বা ওয়েবসাইটে আপলোড করে প্রদত্ত সেবা বিষয়ে যেকোন অফিস অঙ্গীকার করে। কাজেই অঙ্গীকার মোতাবেক সেবা দিতে সে অফিস বাধ্য। সেবাদানের ক্ষেত্রে নাগরিকদের কোন প্রকার হয়রানি করা যাবে না। এতে আরো বলা হয়- সেবা প্রার্থীরা হচ্ছে কাস্টমারের মতো। কাস্টমার না আসলে যেমন কোন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান চলে না, তেমনি সেবা প্রার্থীরা না আসলে বা সেবা না পেলে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরেরও কোন উপযোগিতা থাকে না। কাজেই আমাদের সকলের মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। সেবা দানের ক্ষেত্রে আরো আধুনিক হতে হবে। সেবাদাতার ফোন নাম্বার, ই মেইল ঠিকানা বা আপিল কর্মকর্তার ঠিকানা পরিস্কারভাবে সিটিজেন চার্টারে প্রদর্শন করতে হবে।
উম্মুক্ত আলোচনায় বক্তারা বলেন, সেবাদানের ক্ষেত্রে সকল সেবা প্রার্থীকে সমান সুযোগ দিতে হবে। প্রভাবশালী বা আত্মীয় এলে সাধারন মানুষকে বসিয়ে রেখে তার কাজ আগে করে দেওয়ার মানসিকতা পরিহার করতে হবে। তারা বলেন, সেবা প্রার্থীরা সেবার জন্য অফিসে এসে প্রথমে সাধারন কর্মচারীদের কাছে যায়। সেখানে অনেক ক্ষেত্রে প্রতারিত হয়। কাজেই অফিস প্রধান মাঝে মাঝে ফ্রন্ট ডেস্কে কিছুক্ষণ বসে সেবা দানের নমুনা স্বচক্ষে দেখতে পারে। আবার ছদ্মবেশে মাঝে মধ্যে নিজের অফিসেই সেবা নিতে এসে অফিসের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য পরীক্ষা করতে পারে।
সভাপতি বলেন, বাংলাদেশে ২০০৭ সাল থেকে সিটিজেন চার্টার চর্চা হচ্ছে। অনেকটা সময় পার হয়ে গেছে। অথচ এখনো আমরা চার্টারে উল্লেখিত প্রতিশ্রæতি সময়মত রক্ষা করতে পারছিনা। সেবা প্রার্থীদের খুশি করতে পারছিনা। এটা আমাদের মানসিক দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ। এ দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে হবে। এর জন্য নিজেদের মাইন্ডসেট পরিবর্তন করতে হবে। চাকরিকে শুধু চাকরি হিসেবে না দেখে সেবা হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। তবেই সিটিজেন চার্টার প্রণয়নের উদ্দেশ্য সফল হবে।
সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি, অতিরিক্ত ডিআইজি সঞ্জয় সরকার, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী শাব্বির ইকবাল, উপপুলিশ কমিশনার রইস উদ্দিন বক্তৃতা করেন। বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট কর্মচারীগণ সেমিনারে অংশ গ্রহণ করেন।
আরও পড়ুন

সর্বশেষ