কখনো ভরসা হলো ধৈর্য, কখনো ইতিবাচকতা। দ্রুত উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারায় পড়ে গেল দল, ধৈর্য ধরে এগিয়ে নিলেন কেউ। কখনো ইতিবাচকতায় গড়ে উঠল জুটি, বড় হয়ে দলকে নিল সুবিধাজনক অবস্থায়। বোলারদের ভেতরের ক্ষুধা, উইকেট নেওয়ার তাড়না, লাইন-লেংথ ও গতি প্রতিপক্ষকে করল দিশেহারা।
এভাবেই রচিত হলো ইতিহাস। সপ্তাহখানেক আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট জয় এসেছিল রাওয়ালপিন্ডিতে, ওখানেই স্মৃতিটা হলো আরও রঙিন। প্রথম ম্যাচ ছাপিয়ে এখন সেটি সিরিজ জয়। দেশের ক্রিকেটেরই সবচেয়ে উজ্জ্বল সাফল্যের স্থানের একটি হয়ে থাকল রাওয়ালপিন্ডি।
ম্যাচ শুরুর আগেই রাওয়ালপিন্ডিতে দ্বিতীয় টেস্টে চোখ রাঙিয়েছিল বৃষ্টি। সেই পূর্বাভাসই সত্যি হয়েছিল। ম্যাচের প্রথম দিনের পুরোটাই গিয়েছিল বৃষ্টির পেটে। এরপর ম্যাচের চতুর্থ দিন আবারও হানা দেয় বৃষ্টি। ততক্ষণে প্রথম ইনিংসে ২৬ রানে ৬ উইকেটের বিপর্যয় কাটিয়ে পাকিস্তানকে নাগালের মধ্যে অল আউট করে দিয়ে ম্যাচ জয়ের সম্ভাবনা তৈরি করে রেখেছিল টাইগাররা।
পঞ্চম দিনও বৃষ্টির সম্ভাবনা ছিল। সেই সঙ্গে ছিল বজ্রঝড়ের। তবে সব আশঙ্কা ও শঙ্কার মেঘ দূর করে পাকিস্তানকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এর ফলে লাল বলের ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশের স্বাদ দিয়েছে টাইগাররা। প্রথম টেস্টে পাকিস্তানকে ১০ উইকেটে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। ফলে এই টেস্টে ড্র করলেই সিরিজ নিজেদের করে নিত বাংলাদেশ। তবে জয় দিয়েই সিরিজ শেষ করল টাইগাররা।
বিনা উইকেটে ৪২ রানে চতুর্থ দিনের খেলা শেষ করে বাংলাদেশ। দিন শুরু হওয়ার তৃতীয় ওভারেই দলীয় ৫০ রানে পৌঁছায় বাংলাদেশ। এ দিন কিছুটা সতর্ক হয়েই খেলছিলেন দুই ওপেনার সাদমান ইসলাম এবং জাকির হাসান। ইনিংসে দশম ওভারে উইকেট হারাতে পারত পাকিস্তান।
মোহাম্মদ আলীর বল জাকিরের ব্যাটের নিচের অংশ ছুঁয়ে বল চলে যায় উইকেটরক্ষক সরফরাজ আহমেদের হাতে। আম্পায়ার আউট দেননি। পাকিস্তানের কোনো ক্রিকেটার বুঝতে না পারায় আবেদনও করেননি। তবে টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় বল জাকিরের ব্যাটের কানা ছুঁয়ে গিয়েছিল।
আগের দিন ২৩ বলে ৩১ রান করা এই ব্যাটার এ দিন ৩৯ বলে ৪০ রানে থেমেছেন। ১৩তম ওভারে মীর হামজার ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে বোল্ড হওয়ার আগে তিনটি চার ও দুটি ছক্কা হাঁকিয়েছেন জাকির। দলীয় ৫৮ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এরপর সাদমানকে আউট করার সুযোগ তৈরি করেছিলেন হামজা। তার ব্যাক অব লেংথ ডেলিভারিতে ব্যা ফুট পাঞ্চ করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ তুলেছিলেন বাংলাদেশের এই ব্যাটার। তবে সহজ ক্যাচ নিতে পারেননি সালমান আঘা। অবশ্য পরের ওভারেই খুররম শেহজাদের শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরেন বাংলাদেশের এই ওপেনার।
পাকিস্তানের এই পেসারের পিচড আপ ডেলিভারিতে ড্রাইভ করতে গিয়ে মিড অফে শান মাসুদের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। এরপর কোনো বিপর্যয় ছাড়াই বাংলাদেশকে দলীয় একশতে নিয়ে যান অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুমিনুল হক। তাদের জুটিও পঞ্চাশ পেরিয়ে যায়। প্রথম সেশনে বাংলাদেশ ৮০ তোলে। যদিও হারায় ২
দ্বিতীয় সেশনের শুরুতেই অধিনায়ক শান্তর উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ৩৮ রান করে তিনি আঘা সালমানের বলে গালিতে ক্যাচ দেন আব্দুল্লাহ শফিকের হাতে। শান্ত মূলত ডিফেন্স করতে চেয়েছিলেন। তবে বল ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় গালিতে থাকা ফিল্ডারের হাতে। এরপর মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে বাংলাদেশকে প্রায় জয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যান মুমিনুল। যদিও ধৈর্য্য হারিয়ে আত্মঘাতী শটে উইকেট দিয়ে এসেছেন ৩৪ রান করা এই ব্যাটার। আবরারের ফ্লাইটেড ডেলিভারিতে মিড অফে সাইম আইয়ুবের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়েছেন। অবশ্য বাংলাদেশকে আর কোনো বিপদ হতে দেননি মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসান।
সাকিবের ব্যাট থেকে আসা চারেই জয় পায় বাংলাদেশ। নানামুখী চাপে থাকা দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় তারকা স্মরণীয় সিরিজ জয়ের শেষ ছবিতে থাকেন। তার বল বাউন্ডারি ছুঁতেই উচ্ছ্বাসে ভাসে বাংলাদেশের ড্রেসিংরুম। আজকের দিনটি নিশ্চিতভাবেই তাদের জন্য উৎসবের।
বাংলাদেশের জয় এসেছে দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমের হাত ধরে। ৫১ বলে ২২ রান করে অপরাজিত থাকেন মুশফিক, ৪৩ বলে ২১ রানে সাকিব।