শনিবার, এপ্রিল ২৭, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিনএলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোলের হিস্যা কী হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন চসিক মেয়র

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোলের হিস্যা কী হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন চসিক মেয়র

নির্মাণাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেকে টোলের মাধ্যমে সিডিএ যে অর্থ আদায় করবে সেখানে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) হিস্যা কী হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, সিডিএ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বানাচ্ছে, টোল আদায় করবে তারা, কিন্তু সেখানে চসিকের হিস্যা কী হবে তা আলাপ করা উচিত ছিল। কারণ সিটি কর্পোরেশনের জায়গায় এক্সপ্রেসওয়ে বানাবেন, সিটি কর্পোরেশনের রাস্তা দিয়ে গাড়ি ওঠা–নামা করবে, আমরা সড়ক সংস্কারে ব্যয় করব অথচ আমাদের কোনো হিস্যা থাকবে না তা হবে না। ২৯ মার্চ  অনুষ্ঠিত চসিকের বর্তমান পর্ষদের ৩৮তম সাধারণ সভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। লালদীঘি পাড়স্থ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনের সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুুষ্ঠিত হয়। এতে আগামী সপ্তাহ থেকে লোকবল বৃদ্ধি করে মশক নিধন কার্যক্রম জোরদার করার ঘোষণা দেন মেয়র। সভায় কর্র্পোরেশনের অস্থায়ী কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধিরও সিদ্ধান্ত হয়েছে।

প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৪ নভেম্বর ‘মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী সিডিএ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে’র উদ্বোধন করেন। লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এপ্রিল মাস থেকে যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার কথা রয়েছে। চালুর পর যানবাহন থেকে সর্বনিম্ন ১০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৪৫০ টাকা টোল আদায়ের একটি প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে সিডিএ।

মশক নিধন ইস্যু : মেয়র বলেন, ঢাকার মতো চট্টগ্রামেও মশা দ্রুত বাড়ছে। আগামী সপ্তাহ থেকে স্প্রেম্যান থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট লোকবল বাড়িয়ে মশা নিধনে প্রতিটি ওয়ার্ডে আরো ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। ডেঙ্গুর প্রকোপ প্রতিরোধে এখনই উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। কাউন্সিলরদের মাঠে থেকে তদারকি করতে হবে এ কার্যক্রম।

মশা নিয়ন্ত্রণে গবেষণায় জোর দিয়ে তিনি বলেন, অনেকে মনে করে টনকে টন মশার ওষুধ মারলেই মশা কমবে, এটা ঠিক না। আমাদেরকে পরিবেশগত ভারসাম্যের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। একসময়ে শহরে ব্যাঙ পাওয়া যেত যেটা লার্ভা খেয়ে মশা কমাতে সহায়তা করত। বিভিন্ন ধরনের উপকারি কীট–পতঙ্গ পাওয়া যেত যা এখন পাওয়া যাচ্ছে না। মশার ওষুধের প্রতি মশার প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়েছে। এখন ওষুধ মেরেও মশা মারা যাচ্ছে না। মশা নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে গবেষণা প্রয়োজন।

জনগণকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মেয়র বলেন, আমাদের পরিচ্ছন্ন বিভাগ নালাগুলো পরিষ্কার করছে। অনেক সময় দেখা যায় নালায় ডাবের খোসা থেকে লেপ–তোষক সব ফেলা হয়েছে যা জলাবদ্ধতা তৈরি করে মশার প্রজননক্ষেত্রে পরিণত হচ্ছে। জনগণ সচেতন না হলে মশার প্রকোপ কমানো কঠিন হবে। জনগণ বাড়িতে থাকা জমা পানি প্রতি তিনদিনে একদিন ফেলে দিলে এবং যত্রতত্র ময়লা ফেলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি থেকে জনগণকে বিরত রাখতে পারলে পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটবে।

তিনি বলেন, সিডিএ ৩৬টা খালে যে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প করছে সেগুলোতে বাঁধ দিতে হয়েছে। সিডিএ বর্ষার আগে বাঁধ ও খালের মাটি অপসারণ করলে জলাবদ্ধতা ও মশার প্রকোপ কমবে।

আর্থিক সমস্যায় চট্টগ্রামের উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে জানিয়ে মেয়র বলেন, চট্টগ্রাম দেশের দ্বিতীয় শহর। চট্টগ্রামকে ঘিরে বে–টার্মিনাল, শিল্পপার্ক, গভীর সমুদ্র বন্দরসহ অনেকগুলো বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ প্রকল্পগুলোকে সফল করতে যে ধরনের অবকাঠামো চট্টগ্রামের দরকার তা কেবল শুধু হোল্ডিং ট্যাক্স আর ট্রেড লাইসেন্সের আয় দিয়ে তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণ করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, আমরা বন্দরের আয়ের এক শতাংশ চেয়েছিলাম। আইনের গ্যাঁড়াকলে তা হয়নি। অথচ বন্দরের ৩০ থেকে ৪০ টনের লরি চলাচল করে শহরের রাস্তা নষ্ট করে ফেলছে। প্রতিদিন যে কন্টেনার খালাস হচ্ছে তা থেকে আয়ের একটি অংশ সিটি কর্পোরেশনকে দেয়া উচিত।

তিনি চসিকের ভবনগুলোকে ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের মাধ্যমে আয়বর্ধন করতে হবে জানিয়ে বলেন, এ বিষয়ে আমরা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করব। চসিকের রাজস্ব বিভাগকেও আয় বহুমুখীকরণে মনোযোগ দিতে হবে।

সড়কবাতি নিয়ে যা বললেন : মেয়র বলেন, চসিকের বিদ্যুৎ উপ–বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছিলাম রমজানে সড়কে, মসজিদে, কবরস্থানে আলোকায়ন করতে। কিন্তু আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি অনেক রাস্তায়, গলিতে বাতিই জ্বলে না।

তিনি বলেন, কাউন্সিলররা নিজ নিজ এলাকার বিদ্যুতের ইন্সপেক্টরদের মোবাইল নম্বর রাখবেন। কোনো সড়কে বাতি না জ্বললে জানতে চাইবেন কেন বাতি জ্বলছে না। কেউ রেসপন্স না করলে লিখিত অভিযোগ দিবেন। পরিচ্ছন্ন বিভাগের কর্মীরা অনেক সময় এক–দুই ঘণ্টা কাজ করে চলে যায় বলে শোনা যায়। এদের ব্যাপারেও অভিযোগ দিবেন। তদন্ত করে অভিযোগ প্রমাণিত হলে বরখাস্ত করে দিব।

হকার উচ্ছেদ প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও র‌্যাবের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অবৈধ হকার উচ্ছেদ হওয়ায় মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে। মানুষ খুবই খুশি। মানুষের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ নিরসন হয়েছে। গরীব হকারদের জন্য হলিডে মার্কেটের ব্যবস্থা করব। তবে হকারদের নিয়ে কাউকে চাঁদাবাজি করতে দেয়া হবে না। অলিতে–গলিতে হকার বসিয়ে মানুষকে কষ্ট দেয়া বন্ধ করব। রেলওয়ে ও গণপূর্তের সাথে আমরা যোগাযোগ করছি। পরিত্যক্ত ভূমিতে কেবল সপ্তাহে দু’দিন হলিডে মার্কেট চালু করা হবে।

চসিকের প্রকৌশল বিভাগের উদ্দেশ্যে মেয়র বলেন, শুষ্ক মৌসুমে ফুটপাত রং করা, জেব্রা ক্রসিং এবং রোডমার্কিংয়ের কাজ একমাসের মধ্যে শেষ করতে হবে। কিছুদিন আগে একজন জানালো একটা রাস্তা বানানোর কিছুদিনের মধ্যে রাস্তাটা কেটে ফেলেছে। সমন্বয় করলে রাষ্ট্রের সম্পত্তির এ অপচয় রোধ করা যাবে।

আমাদেরকে কিছু কিছু সড়ক ব্লক দিয়ে নির্মাণ করা যায় কীনা তা ভাবতে হবে। প্রয়োজনে পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। ঈদের সময় নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইন–শৃক্সখলা বাহিনীগুলোকে ভূমিকা পালনের জন্যও আহ্বান জানান মেয়র। চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, স্থায়ী কমিটির পরামর্শ অনুসারে ১ জুলাই থেকে অস্থায়ী কর্মচারীদের বেতন বাড়ানো হবে। চসিকের অস্থায়ী কর্মচারীদের স্থায়ীকরণের কার্যক্রমও অনেকটুকু এগিয়ে গেছে।

সভায় হলিডে মার্কেট প্রসঙ্গে গণপূর্ত অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী রমিজুর রহমান বলেন, বায়েজিদ এলাকায় গণপূর্ত অধিদপ্তরের উদ্ধারকৃত জায়গায় হকারদের জন্য হলিডে মার্কেট স্থাপনের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দিতে হবে। জনস্বার্থ বিবেচনায় হলিডে মার্কেট বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে। ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুর রউফ জানান, গ্রীষ্মে কিছু এলাকায় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। আমরা পানি সরবরাহ ও লিকেজ মেরামতের জন্য ভিজিল্যান্স টিম গঠন করেছি। সহসাই পানির সংকটের সমাধান হবে।

সিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগের এডিসি মো. কাজী হুমায়ুন রশীদ বলেন, অবৈধ হকার উচ্ছেদ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ সর্বাত্মক সহায়তা করেছে এবং ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে। তবে উচ্ছেদ অভিযান বিকালে পরিচালনা করলে আরো বেশি সুফল পাওয়া যাবে। কারণ, হকাররা মূলত বিকালে সড়ক–ফুটপাত দখল করে নিচ্ছে যা নগরে তীব্র যানজট সৃষ্টি করছে। নির্বিঘ্নে রাস্তা পারাপারের স্বার্থে নগরীজুড়ে জেব্রা ক্রসিং গড়ে তুলতে হবে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ