বৃহস্পতিবার, মে ২, ২০২৪
প্রচ্ছদইসলাম ও জীবনআল্লামা  মুফতি মুহাম্মদ শফিউর রহমান (রহ) জামে মসজিদ

আল্লামা  মুফতি মুহাম্মদ শফিউর রহমান (রহ) জামে মসজিদ

দক্ষিণ চট্টগ্রামে মসজিদের উপজেলা বার আউলিয়া স্মৃতি বিজড়িত চন্দনাইশ। এই উপজেলায় বেশ কয়েকটি ঐতিহ্যবাহীর মধ্যে “মুফতি পরিবার” সুপ্রসিদ্ধ ও খ্যাতিসম্পন্ন পরিবার। এই পরিবারের নামানুসারে পাড়ার নাম “মাওলানা মন্জিল” রাখা হয়। চন্দনাইশের ঐতিহ্যবাহী  মুফতি পরিবারের প্রধান কেন্দ্র বিন্দু মুফতি শফিউর রহমান (রহ)।  তিনি নিজ জায়গায় ১৯৪৭ সালে দুই রুম বিশিষ্ট একটি মাটির  এবাদতখানা নির্মাণ করেন। এটি “মুফতি সাহেব এবাদতখানা” নামে সুপ্রসিদ্ধ ছিলো। এটি শুধুমাত্র একটি এবাদতখানা ছিলো না।  এইখান থেকে মুফতি সাহেব ইসলামের দাওয়াত এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের প্রচার প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। এই এবাদতখানায় নামাজের পাশাপাশি দ্বীনি দাওয়াত কার্যক্রম, কোরআন তেলওয়াত, মৃতদেহ গোসলের ব্যবস্থা ও প্রশিক্ষণ এবং ইমামদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ছিলো। মুফতি সাহেবের সান্নিধ্যে অনেক আলেম ওলামা ও পীর মাশায়েখগণ আসতেন। লোকে মুখে শুনা যায়, এই এবাদতখানাটি পাশাপাশি  মুফতি সাহেবের খানেকাহ হিসেবেও সুপরিচিত ছিলো। পরিবারের সদস্যরা ভন্ডামী ও ধান্দাবাজ হওয়ার আশংকায় মুফতি সাহেব দরবার গড়ে তুলেননি। পরিবারের সদস্যদেরকে এই ব্যাপারে কড়া নিষেধ করেন।  এমনকি তাঁর কবর পাকা করতেও। এলাকার প্রভাবশালী সমাজকর্মীরা “মুফতি সাহেব এবাদতখানা” টি মসজিদ ও খানেকাহসহ পাকা করতে বারবার এগিয়ে আসলে তাদেরকে প্রতিবারই  না করে দেন। মুফতি সাহেব এবাদতখানাটি বেশ কয়েকবার  নিজ অর্থায়নে বাঁশের বেড়া দিয়ে পুননির্মাণ করেন।
১৯৯৮ সালে মুফতি পরিবারের উদ্যোগে “মুফতি সাহেব এবাদতখানা” এর পূর্বে কিছু দূরে মুফতি সাহেবের কবরের পাশে  এবাদতখানাটি স্থানান্তরিত করা হয়। তাইতো কবি কাজী নজরুল ইসলাম যথার্থ বলেছেন, “মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই। যেন গোরে থেকেও মোয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই।”
আপসোস!  এই এবাদতখানাটি বেশিদিন রক্ষা হয়নি। মুফতি সাহেব জীবিত থাকাবস্থায় এলাকায় মাজারে বেহায়াপনা ও অশ্লীলতার বিপক্ষে কঠোর  অবস্থান এবং ভন্ডদের ভণ্ডামির মুখোশ খুলে দিতেন বলে সেই ক্ষোভে তারা রাতের অন্ধকারে আগুনে জ্বালিয়ে দিয়ে মূহুর্তের মধ্যে ছারখার করে দেয়। অথচ হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মসজিদ নির্মাণ করবে, মহান আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে অনুরূপ ঘর তৈরি করে দেবেন।’ (বুখারী : ৪৫০)।
মুফতি সাহেবের পরিবারের সদস্যরা কারো কাছে সাহায্য চায়নি। তারা যা চাওয়ার মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে  জায়নামাজে চেয়েছিলেন। এইটা অবশ্যই মুফতি সাহেব খ্যাত মুফতি শফিউর রহমান (রহ) এর কাছ থেকে শিখা। মুফতি সাহেবের হাতে গড়া এবাদতখানাটি পূর্বের জায়গায় বহাল রাখা হয়। পরবর্তীতে ২০০৬ সালে মুফতি পরিবারের উদ্যোগে এবাদতখানাটি পাকাকরণের মাধ্যমে মসজিদ রুপান্তরিত করেন। একইসাথে প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ শায়খুল হাদীস আল্লামা ফখরুদ্দীন (রহ)’র পরামর্শে এবং নির্দেশনায় জুমার নামাজ চালুর মাধ্যমে মুফতি সাহেবের নামে “আল্লামা  মুফতি মুহাম্মদ শফিউর রহমান (রহ) জামে মসজিদ” নামকরণ করা হয়। এই জামে মসজিদের উত্তর পার্শ্বে একটি বড় পুকুর এবং পূর্ব পার্শ্বে একটি  মাঠ রয়েছে।
 মুফতি সাহেবের ওফাতের পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত  ইমাম ও খতীবের দায়িত্ব পালন করে আসছেন  মাওলানা মঈনুদ্দীন সাহেব। পাশাপাশি বিভিন্ন  সময় মুফতি সাহেবের অন্যান্য সন্তানরা  ইমাম ও খতীবের দায়িত্ব পালন করেছেন। বিশেষ করে মাওলানা বোরহান উদ্দীন চট্টগ্রামের রেলওয়ে হাই স্কুলে প্রধান মৌলভী হিসেবে অবসরের পর থেকেই আমৃত্যু পর্যন্ত  “আল্লামা  মুফতি মুহাম্মদ শফিউর রহমান (রহ) জামে মসজিদ” এর ইমাম ও খতীবের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে মাওলানা মঞ্জিলের জনগণের সার্বিক সহযোগিতা এবং পরামর্শে জামে মসজিদের অবকাঠামো উন্নয়ন এবং সৌন্দর্য দিন দিন  বৃদ্ধি পাচ্ছে।  একই সাথে এই জামে মসজিদে বিভিন্ন উপলক্ষে বিভিন্ন সময় কোরআনের খতম ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
মোহাম্মদ ইমাদ উদ্দীন, লেখক : কলামিস্ট। সদস্য, চট্টগ্রাম ইতিহাস চর্চা কেন্দ্র। যুগ্মসচিব , বাংলাদেশ মুসলমান ইতিহাস সমিতি।
আরও পড়ুন

সর্বশেষ