যথাযোগ্য মর্যাদায় এবং উৎসবমুখর পরিবেশে হিমালয়ের লীলাভূমি ভুটানে উদযাপিত হয়েছে গৌরবোজ্জ্বল বিজয় দিবস। এ উপলক্ষ্যে থিম্পুস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃক আয়োজিত বিশেষ বিজয় উৎসবের প্রধান অতিথি ছিলেন ভুটান সরকারের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা দাসো ছেয়াও রিনজিন। ভুটানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শিবনাথ রায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই মনোজ্ঞ আয়োজনে ভুটানের পররাষ্ট্র সচিব, অবকাঠামো বিষয়ক সচিবসহ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ, ভুটানে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূতসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার কূটনীতিকবৃন্দ, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ এবং সর্বস্তরের প্রবাসী বাংলাদেশীগণ অংশগ্রহণ করেন।
স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানকারী প্রথম দেশ ভুটানের মাটিতে আয়োজিত এই বিজয় উৎসবের শুরুতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শিবনাথ রায় অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি এবং ভুটান সরকারের প্রতিনিধিদের নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক প্রদান করেন। এরপর পবিত্র কোরান, গীতা, ত্রিপিটক ও বাইবেল থেকে বিশেষ পাঠ করা হয়। স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শিবনাথ রায় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের অর্জনকে অর্থবহ করতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সবাইকে কাজ করে যেতে হবে। তিনি স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সকল বীর মুক্তিযোদ্ধা, আত্মোৎসর্গকারী সকল শহীদ এবং মা-বোনদের আত্মত্যাগের কথা গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের মাইলফলক স্বপ্নের পদ্মাসেতু, ঢাকা মেট্টোরেল, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলসহ বর্তমান সরকারের গৃহীত অন্যান্য উন্নয়ন কার্যক্রম তুলে ধরেন। ভুটান সরকার কর্তৃক স্বাধীন বাংলাদেশকে সর্বপ্রথম স্বীকৃতি প্রদান এবং দু’দেশের চমৎকার সম্পর্কের কথাও রাষ্ট্রদূত তার বক্তব্যে তুলে ধরেন। এরপর অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ভুটান সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তার বক্তব্যে বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশের জনগণকে অভিনন্দন জানান। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য জাতির পিতার সম্মোহনী নেতৃত্ব এবং উন্নয়নের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অবদানের কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে বিদ্যমান চমৎকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আর বেগবান করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
এরপর বিজয় দিবসের তাৎপর্য এবং বাংলাদেশ-ভুটান সম্পর্কের রূপরেখা বিষয়ে বিশেষ প্রেজেন্টেশান উপস্থাপন করেন দূতাবাসের কাউন্সেলর সুজন দেবনাথ। তিনি ভুটানের তৃতীয় রাজা জিগমে দর্জি ওয়াংচুক কর্তৃক বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের প্রেক্ষাপট এবং বাংলাদেশ-ভুটানের মধ্যকার ঐতিহাসিক যোগাযোগের উপরও আলোকপাত করেন। এরপর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে বিশেষ প্রামাণ্য চিত্র এবং মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী শিশূ-কিশোরদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণের পরে অতিথিদের বিশেষ বাংলাদেশী খাবার পরিবেশন করা হয়।
এর আগে বিজয় দিবসের সূর্যোদয়ের সাথে সাথে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শিবনাথ রায় প্রবাসী বাংলাদেশী এবং দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর পরিবারের সকল শহিদসহ শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মার মাগফিরাত এবং দেশের সার্বিক কল্যাণ কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী, মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কর্তৃক প্রেরিত বাণী পাঠ করা হয়। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে ভুটান প্রবাসী শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে বিশেষ রচনা ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতাও আয়োজন করা হয়।