সোমবার, এপ্রিল ২৯, ২০২৪
প্রচ্ছদজাতীয়আওয়ামী লীগের কাছে দেশের স্বার্থই বড় : প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগের কাছে দেশের স্বার্থই বড় : প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগের কাছে দেশের স্বার্থই বড় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, আমেরিকার প্রস্তাবে রাজি হলে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় এবং এত চমৎকার ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা বানানো সম্ভব হতো না। রোববার (১২ নভেম্বর) নরসিংদীতে ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা উদ্বোধন ও সুধী সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।

২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের নির্বাচনে হারানোর জন্য শুধু বিদেশিদের দোষ দিয়ে লাভ নেই, আমাদের দেশের কিছু জ্ঞানী-গুণীও উঠেপড়ে লেগেছিলেন, কীভাবে আওয়ামী লীগকে হারানো যায়। আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর অকথ্য নির্যাতন করা হয়। এক রকম জোর করার কারণেই আমরা সেই নির্বাচনে সরকারে আসতে পারিনি।

তিনি বলেন, মার্কিন রাষ্ট্রপতি আমাদের দেশে এসেছিলেন। আমাকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন- একই প্রস্তাব (সার রাফতানির)। পরবর্তীকালে যখন লতিফুর রহমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হন। তার বাড়িতে আমাদের দাওয়াত দেয়া হয়েছিল। আমাদের পার্টি থেকে আমি এবং তখনকার সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান আর বিএনপির পক্ষ থেকে ছিলেন খালেদা জিয়া এবং মান্নান ভুঁইয়া। সেখানে জিমি কার্টার আসেন দূত হিসেবে। এবারও তার একই প্রস্তাব। আমি একই কথা বলেছি যে, আমাকে সার্ভে করতে হবে, আমার দেশের মানুষের চাহিদা মেটাতে হবে, পঞ্চাশ বছরের রিজার্ভ থাকতে হবে, তারপর উদ্বৃত্ত গ্যাস বিক্রির কথা আমি চিন্তা করবো। তাছাড়া দেশের সম্পদ বিক্রি করে ক্ষমতায় আসতে হবে এই দৈন্যতায় অন্তত বঙ্গবন্ধুর কন্যা ভোগে না। আমার কাছে ক্ষমতা বড় না।
  
সরকারপ্রধান বলেন, আজকে একবার চিন্তা করেন, সেদিন যদি আমি গ্যাস বিক্রি করতে রাজি হতাম তাহলে কি আজকে এত চমৎকার সার কারখানা আমরা করতে পারতাম? কোনোদিনই হতো না! কিন্তু খালেদা জিয়া রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। আমার চোখের সামনেই যুক্তরাষ্ট্রের তখনকার রাষ্ট্রপতি এসে তার পিঠে হাত দিয়ে বাহবাও দিয়েছিলেন। তখন আমি জিল্লুর রহমান সাহেবকে বলেছিলাম, চাচা এখন চলেন। আমি বুঝতে পেরেছি কী হবে। কিন্তু আমি এটা কেয়ার করিনি। আমার কাছে ক্ষমতা বড় না, দেশের স্বার্থ বড়। আমরা সেখান থেকে চলে এসেছিলাম’, যোগ করেন শেখ হাসিনা।
 
এর আগে দুপুর পৌনে একটায় সুইচ টিপে ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় সার কারখানা। উদ্বোধানের পর দোয়া মোনাজাত শেষে মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী। ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা উদ্বোধন উপলক্ষে সার কারখানা স্মারক ডাকটিকিট, উদ্বোধনী খাম ও সিলমোহর অবমুক্ত করেন শেখ হাসিনা।
 
বিকেলে নরসিংদী জেলার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় যোগদান শেষে সন্ধ্যা ৬টায় ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন প্রধানমন্ত্রী।
 
নরসিংদীর পলাশে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ পরিবেশবান্ধব ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানায় এরই মধ্যে শুরু হয়েছে পরীক্ষামূলক উৎপাদন। জ্বালানি সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব এই কারখানায় বছরে ৯ লাখ ২৪ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার উৎপাদন হবে। দিনে উৎপাদন হবে ২ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে ১৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
 

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৮ সালের অক্টোবরে কারখানার নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি শুরু হলে প্রকল্পের অবকাঠামোর কাজ বাধাপ্রাপ্ত হয়। পরে একই বছরের ১৬ আগস্ট পূর্ণোদ্যমে কাজ শুরু হয়। যার দায়িত্ব পায় চীনের সিসি সেভেন এবং জাপানের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মিৎসুবিশি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। এরপর ২০২২ সালের ২১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

১১০ একর জমির ওপর নির্মিত প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকার ৪ হাজার ৫৮০ কোটি ২১ লাখ টাকা আর জাপান ও চীনের ঠিকাদারদের যৌথ কনসোর্টিয়াম ব্যাংক অব টোকিও-মিৎসুবিশি ইউএফজে লিমিটেড ও দ্য হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন লিমিটেড ১০ হাজার ৯২০ কোটি টাকার ঋণ দেয়।

 দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে ইউরিয়া সারের চাহিদা মোটানো ও সুলভমূল্যে কৃষকদের কাছে সার সরবরাহ নিশ্চিত, আমদানি হ্রাস করে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে এই কারখানা অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আরও পড়ুন

সর্বশেষ