শুক্রবার, মে ৩, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিনস্ত্রীসহ কাউন্সিলর সলিম উল্যাহ বাচ্চুর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

স্ত্রীসহ কাউন্সিলর সলিম উল্যাহ বাচ্চুর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

বৈধ ও গ্রহণযোগ্য দোকান ভাড়া বাবদ আয়ের উৎস পাওয়া গেছে ৪ লাখ ৯৫ হাজার ৬০০ টাকা। কিন্তু দুদক খুঁজে পেয়েছে ৯৯ লাখ ৩৪ হাজার ৩৪৫ টাকার সম্পদ। এক্ষেত্রে ৯৪ লাখ ৩৮ হাজার ৭৪৫ টাকা আয়ের চেয়ে বেশি সম্পদ অর্জন করে ভোগ দখলে রেখেছেন। তিনি হলেন, নগরীর এনায়েত বাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. সলিম উল্যাহ ওরফে বাচ্চুর স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা। বাচ্চুর সহযোগিতায় এবং তার অসাধু উপায়ে অর্জিত অর্থ বৈধ করতে তার স্ত্রী নানা কূটকৌশলে এসব অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। আয়ের উৎস হিসেবে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন নানা ব্যবসা এবং মৎস্য চাষ প্রদর্শন করেছেন। পরস্পর যোগসাজসে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের এ ঘটনায় রোববার দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম–১ এ কাউন্সিলর মো. সলিম উল্যাহ ও তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। কার্যালয়ের উপ সহকারী পরিচালক সবুজ হোসেন মামলাটি দায়ের করেন।

দুদক জানায়, কাউন্সিলর পত্নী আয়েশা ছিদ্দিকা ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ দুদকে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। এতে তিনি নিজ নামে কোনও অস্থাবর সম্পদের ঘোষণা দেননি। তবে একটি দলিল মূলে এবং একটি বাণিজ্যিক ও একটি ফ্ল্যাট চুক্তিমূলে ক্রয় বাবদ ১ কোটি ৮৫ লাখ ৭০ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ থাকার কথা উল্লেখ করেন।

যাচাই করলে দেখা যায়, আয়েশা সিদ্দিকা ১ কোটি ৭৯ লাখ ১৩ হাজার ৫৪৪ টাকার স্থাবর ও ১ লাখ ৩৪ হাজার ২০১ টাকার অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন। ৯৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকার দায় রয়েছে আয়েশা সিদ্দিকার উল্লেখ করে মামলার এজাহারে বলা হয়, এ দায় বাদে তার নিট সম্পদের পরিমাণ ৮৩ লাখ ৯৯ হাজার ৭৪৫ টাকা এবং একই সময়ে তিনি ১৫ লাখ ৩৪ হাজার ৬০০ টাকা পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয় করেছেন। এসবসহ তার মোট অর্জিত সম্পদের পরিমাণ ৯৯ লাখ ৩৪ হাজার ৩৪৫ টাকা। বিপরীতে তার বৈধ ও গ্রহণযোগ্য দোকান ভাড়া বাবদ আয়ের উৎস পাওয়া গেছে ৪ লাখ ৯৫ হাজার ৬০০ টাকা। এক্ষেত্রে তিনি ৯৪ লাখ ৩৮ হাজার ৭৪৫ টাকা আয়ের চেয়ে বেশি সম্পদ অর্জন করে ভোগ দখলে রেখেছেন। সম্পদ বিবরণীতে আয়েশা সিদ্দিকা আয়ের উৎস হিসেবে ব্যবসার আয়, মৎস্য আয় ও দোকান ভাড়ার বিপরীতে অগ্রিম গ্রহণের বিষয় উল্লেখ করেন।

অনুসন্ধানের সময় মো. সলিম উল্যাহ দুদককে জানান, তার স্ত্রীর সকল ব্যবসা ও মৎস্য চাষ তিনি পরিচালনা করেছিলেন। কিন্তু তারা ব্যবসা বাবদ প্রদর্শিত আয়ের বিপরীতে ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স, দোকান ভাড়ার চুক্তিপত্র, ক্রয়–বিক্রয়ের চালান/ভাউচার কোনো কিছুর রেকর্ডপত্র দাখিল করতে পারেন নি। দুদক জানায়, আয়েশা সিদ্দিকার আয়কর রিটার্নে পর্যাক্রমে ২০০১–২০০২ করবর্ষ থেকে ২০১৯–২০২০ করবর্ষে ব্যবসা আয় বাবদ প্রদর্শিত ৪১ লাখ ৮৭ হাজার ৭৯৫ টাকা গ্রহণযোগ্য নয়। সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে তার ব্যবসার কোনও অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এছাড়াও আয়েশা সিদ্দিকা মৎস্য চাষের জন্য ২০০৭ সালের ৫ জানুয়ারি নগরীর দক্ষিণ কাট্টলীর বাসিন্দা আবু সাঈদ চৌধুরীর (সম্রাট) সাথে যে চুক্তিপত্র করেছেন তা খতিয়ে দেখার পর মিথ্যা বলে প্রতীয়মান হয়েছে।

দুদক জানায়, মো. সলিম উল্যাহ জম জম হ্যাচারি লাগিয়ত তিন ফর্দ চুক্তিপত্র উপস্থাপন করেন। গত ১৭ আগস্ট তা জব্দ করা হয়। জব্দকৃত তিন ফর্দ চুক্তিপত্রে ৭৫ টাকা মূল্যমানের দুটি স্ট্যাম্প রয়েছে। এ দুটি স্ট্যাম্প কত তারিখে কার নিকট বিক্রি করা হয়েছে তার প্রতিবেদন চেয়ে জেলা প্রশাসনের ট্রেজারি শাখায় চিঠি দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ট্রেজারি শাখা প্রতিবেদন দাখিল করে।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, স্ট্যাম্প দুটি ২০০৭ সালের ২৮ আগস্ট ও ২০১০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ট্রেজারি শাখা থেকে সরবরাহ করা হয়েছে। ফলে ২০০৭ সালের ৫ জানুয়ারি আয়েশা সিদ্দিকা ও আবু সাঈদ চৌধুরীর (সম্রাট) মধ্যে চুক্তি করার কোনও ভিত্তি নেই। রেকর্ডপত্রে দেখা যায়, আবু সাঈদ চৌধুরী (সম্রাট) চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার জম জম হ্যাচারি ফার্মটি দলিল মূলে এ কে এম ফেরদৌস হোসাইনের কাছ থেকে ক্রয় করেন। অনুসন্ধানকালে চন্দনাইশের বাসিন্দা এ কে এম ফেরদৌস হোসাইনের বক্তব্য গ্রহণ করা হয়। তিনি জানান, আনুমানিক ২০১০ বা ২০১১ সালে নগদ টাকার প্রয়োজন হলে তিনি ৮টি পুকুর বা ৫৯৩ শতক জমি বিক্রয়ের প্রস্তাব করলে মো. আবু সাঈদ চৌধুরী (সম্রাট) ক্রয়ের আগ্রহ প্রকাশ করেন। ২০১২ সালে বিভিন্ন তারিখে সাফ বিক্রি কবলা মূলে এ কে এম ফেরদৌস হোসাইন ৮টি পুকুর বা ৫ একর জমি আবু সাঈদ চৌধুরীর স্ত্রী সালমা সাঈদ চৌধুরীর নামে রেজিস্ট্রি দলিল করে দেন। দলিল মূলে জমি রেজিস্ট্রি দেওয়ার পর তিনি ৮টি পুকুর আবু সাঈদ চৌধুরীকে (সম্রাট) ভোগ দখল বুঝিয়ে দেন। এ কে এম ফেরদৌস হোসাইনের বক্তব্য অনুযায়ী ২০১২ সাল পর্যন্ত পটিয়ার চক্রশালার জম জম ফার্মস’র ৮টি পুকুর তার ভোগদখলে ছিল। সুতরাং আসামি আয়েশা সিদ্দিকার আয়কর নথিতে ২০০৮–২০০৯ করবর্ষ থেকে ২০১০–১১ করবর্ষে মৎস্য আয় বাবদ প্রদর্শিত ৯৯ লাখ ৮ হাজার ৪০০ টাকার আয় গ্রহণযোগ্য নয়। ব্যবসা আয় বাবদ ও মৎস্য চাষের আয় বাবদ তিনি মোট ১ কোটি ৪০ লাখ ৯৬ হাজার ১৯৫ টাকা আয়কর নথিতে মিথ্যা ও ভিত্তিহীনভাবে প্রদর্শন করেছেন। যা গ্রহণযোগ্য নয়।

মামলার এজাহারে বলা হয়, মো. সেলিম উল্যাহ তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকার জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদ অর্জনের বিষয়ে জানতেন। এভাবে আয়েশা সিদ্দিকা তার স্বামী আসামি মো. সলিম উল্যাহ ওরফে বাচ্চুর সহযোগিতায় এবং তার অসাধু উপায়ে অর্জিত অর্থ বৈধ করার অপচেষ্টায় প্রাথমিকভাবে আয়কর নথিতে এবং পরবর্তীতে দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে তার নামে অর্জিত সম্পদের আয়ের উৎস হিসেবে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন নানা ব্যবসা এবং মৎস্য চাষের ফিরিস্তি প্রদর্শন করেছেন। যা দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ও দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম–১ এর উপ পরিচালক নাজমুচ্ছায়াদাত বলেন, দুদকের অনুমতি নিয়ে অনুসন্ধান করা হয়েছে। এতে অভিযোগ বিষয়ে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। একপর্যায়ে দুদক প্রধান কার্যালয় কাউন্সিলর সলিম উল্যাহ ও তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকার বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। তদন্ত করে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে বলেও জানান দুদক কর্মকর্তা নাজমুচ্ছায়াদাত।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ