রবিবার, এপ্রিল ২৮, ২০২৪
প্রচ্ছদশিল্প ও সাহিত্যআগামীকাল কি হবে, আজ আমরা সেটা জানি না বলে পৃথিবী এতটা সুন্দর

আগামীকাল কি হবে, আজ আমরা সেটা জানি না বলে পৃথিবী এতটা সুন্দর

বাসা থেকে বের হবার সময় ভাইয়া বললো,

– বৃষ্টি তুই নাকি তোর ভাবির তিন হাজার টাকা চু/রি করেছিস? তোর টাকা দরকার হলে আমাকে তো বলতে পারিস। চু/রি করার কি দরকার?

ব্যাগপত্র নিয়ে সাজেকে যাচ্ছি। ঠিক সেই মুহূর্তে এমন কথা শুনে অবাক হয়ে ভাইয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। বিকাল থেকে ভাবি নাকি তার ব্যাগের ভেতর রাখা তিন হাজার টাকা খুঁজে পাচ্ছে না। আমাকে কয়েকবার জিজ্ঞেস করেছে। আমার সামনেই বিভিন্ন যায়গা খোজাখুজি করলো। আমি তাকে বিকেলেই বলেছি যে টাকার বিষয় আমি কিছু জানি না।

– কিরে কথা বলিস না কেন? সত্যি সত্যি যদি টাকা নিয়ে থাকিস তাহলে দিয়ে দে। আমি বেতন পেলে তখন তোকে কিছু টাকা দেবো।

আমি বললাম,
– বিকেলে তো ভাবিকে বললাম যে টাকার কথা আমি জানি না। তারপরও তুমি সরাসরি আমাকে চোর বললে কেন?

– দেখ বৃষ্টি, তুই আমি আর আমাদের চার বছরের বাচ্চা ছাড়া আর কেউ তো থাকে না। তাহলে কে নেবে সেই টাকা?

– আমি কি জানি? আমার দিন এতটাও খারাপ আসেনি যে ভাবির টাকা চুরি করতে হবে।

– তাহলে এই-যে সাজেকে না কোথায় ঘুরতে যাচ্ছিস, টাকা পেলি কোথায়?

– তুমি ভালো করেই জানো আমি একটা ছোট্ট জব করি। তারপর রাতে আর দুটো টিউশনি আছে। সুতরাং টাকা চুরি করে তোমার এই বোনের ঘুরতে যেতে হবে না। নিজের টাকায় যাবে।

আর কিছু না বলে আমি ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে আসি। আব্দুল্লাহপুর থেকে আমাদের বাস ছাড়বে রাত দশটায়। একটা গ্রুপের সঙ্গে আমরা পরিচিত তিন বান্ধবী যাচ্ছি। বাকি সবাই অপরিচিত।

বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে অ্যাডমিন আসাদ ভাইয়ের সাথে কথা বলে বাসে উঠে বসলাম। ” ইউনিক পরিবহন ” এর ননএসি বাসে করে আমাদের আজকের ভ্রমণ শুরু হবে। আমরা তিনজন রিক্তা, সোহানা ও আমি নাজমা আক্তার বৃষ্টি।

জানালার পাশে বসে বাহিরে তাকিয়ে আছি। বাসার কথা বারবার মনে পড়ছে। এবার সাজেক ট্যুর শেষ করে ভাইয়ার বাসা ত্যাগ করতে হবে। এইতো মাস চারেক আগে মৃত্যুর সময় মা আমাকে বলেছিলেন ” যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সজীবকে বিয়ে করে আলাদা হয়ে যাবি। “

সজীবের সঙ্গে আমার প্রায় দুই বছরের একটা সম্পর্ক ছিল। আমার সবচেয়ে অপছন্দের বিষয় হচ্ছে রাজনীতি। অথচ সেই রাজনীতির সঙ্গে ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িত ছিল সজীব। সবচেয়ে পছন্দের মানুষটা যখন সবচেয়ে অপছন্দের কাজ করে তখন কার কেমন লাগে জানি না। কিন্তু আমি কেন জানি মেনে নিতে পারছিলাম না। সজীব রাজনীতি করে সেটাও জানতাম না আগে।

সজীবের বাসা গাজীপুর চৌরাস্তায়। প্রচুর বৃষ্টির মধ্যে এক রাতে তার সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল জয়দেবপুর রেলস্টেশনের কাছে। বিকেল থেকে ঝড়বৃষ্টির কারণে সন্ধ্যার পরপরই সবকিছু যেন নিস্তব্ধ হয়ে গেছিল সেদিন। সেই রাতে অনেকটা দায়িত্ব নিয়ে আমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়েছিল সজীব। মা তখন বেঁচে আছে।

বাসার সামনে এনেও তাকে সেদিন এক কাপ চা খেতে বাসায় নিতে পারিনি। যখন বিদায় নিয়ে চলে যাচ্ছিল তখন আমি বলেছিলাম,

– ভদ্রতার সহিত বাসায় নেওয়া দরকার। কিন্তু সেই ক্ষমতা নেই বলে নিতে পারছি না। আপনার এক কাপ চা পাওনা রইলো। যদি কখনো সুযোগ হয় তাহলে খাইয়ে দেবো।

আবার যেন কখনো দেখা হয় তাদের ফোন নাম্বার আদানপ্রদান হয়েছিল। তারপর থেকে আস্তে আস্তে কথাবার্তা চলতে চলতে অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেল। সে জানতো আমি রাজনীতি পছন্দ করি না। সজীব বলেছিল সেও রাজনীতি করে না। তবে আমি কেন পছন্দ করি না সেটা জিজ্ঞেস করেছিল। আমি বলেছিলাম ” আমার বাবা এই রাজনীতির কারণে মারা গেছে। আমাদের সম্পুর্ণ জীবন এলোমেলো হয়ে গেছে শুধু রাজনীতির কারণে। “

মা মারা যাবার আগেই আমি জানতে পারি সজীব রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। মা তখন হাসপাতালে ভর্তি। অবস্থা খুব খারাপ। এক রাতে হাসপাতালের রিসিপশনের সামনে বসে ছিলাম। টিভির খবরে তখন গাজীপুরের একটা সমাবেশের সংবাদ প্রচার হচ্ছে। সেখানে সজীবকে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। প্রায় মিনিট খানিক তাকে দেখা গেল টিভিতে প্রতিবেদনে।

সজীব হাসপাতালে এসেছিল রাত বারোটার দিকে। আমি তার একটা হাত ধরে জিজ্ঞেস করলাম ” কেন মিথ্যা বললে? “

সজীব চুপ করে রইল। আমি তেমন কিছুই আর বললাম না। মা অনেক অসুস্থ ছিলেন। পরদিন সকাল আটটার দিকে মা মারা গেল। মায়ের লাশ দাফনের আগ পর্যন্ত সজীব ভাইয়ার সঙ্গে ছিল। মায়ের মৃত্যুর চারদিন পরে সজীবের সঙ্গে কথা বললাম।

হয়তো নিজের ইগো বজায় রাখার জন্যই সেদিন তাকে বললাম ” তুমি আমার সঙ্গে মিথ্যা বলে কেন নিজের সম্বন্ধে কথা লুকালে? তোমার সঙ্গে আমার আর কোনো সম্পর্ক না থাকাই ভালো। “

ওর রাগ ছিল অনেক, অনেক কথা হলো সেদিন। ঝগড়াঝাটি শেষ করে যাবার সময় সে বলেছিল সত্যি সত্যি আর কখনো আসবে না।

সজীব তার কথা রাখেনি। চলে যাবার চারদিন পরে আবার এসে হাজির। কিন্তু সে তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলেও আমি আমার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলাম না। এরপর থেকে যখনই আসতো তখনই ফিরিয়ে দিতাম তাকে।

যে ভুল করে তাকে ক্ষমা করা যায়,
কিন্তু যে সবকিছু জেনেশুনে মিথ্যা বলে বিশ্বাস ভাঙ্গে তাকে ক্ষমা করা যায় না।

” আরে সজীব ভাই না? “

ভাবনায় বিচ্ছেদ হলো রিক্তার কথা শুনে। সামনে তাকিয়ে দেখি ঘাড়ে একটা ব্যাগ নিয়ে সজীব বাসের মধ্যে প্রবেশ করেছে। আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ওঠে। আমি কিছু না বলে চুপচাপ বসে রইলাম। রিক্তা আমার কাছে ছিল। সজীব একদম পিছনের দিকে গিয়ে বসলো। আমি রিক্তার দিকে তাকাতেই সে বললো,

” স্যরি বৃষ্টি, ভাইয়াকে আমিই বলেছিলাম। “

★★

খাগড়াছড়ি যখন নামলাম তখন সকাল সাতটা। যে যার ব্যাগপত্র নিয়ে বাস থেকে নেমে “মনটানা” রেস্টুরেন্টের সামনে দাঁড়ালাম। সজীব আমার সামনে এসে মাথা নিচু করে বললো,

” রাতে দেখলাম দুবার বমি করেছ, এখন শরীর কেমন লাগছে? “

আমি কোনো কথা না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি। সজীব আবার বললো,

” আমি সবকিছু ছেড়ে দেবো, তুমি আমার সঙ্গে আগের মতো কথা বলো প্লিজ। আমি এখানে এসেছি বলে রাগ করছো? “

বললাম ” একটা কথা বলি? “

” হ্যাঁ বলো। “

” আপনি এসেছেন তাতে আমার কোনো সমস্যা নেই। আপনার টাকা দিয়ে আপনি এসেছেন। কিন্তু আমাকে যদি বিরক্ত করেন তাহলে অনেক সমস্যা আছে। “

” চাইলে কিন্তু সবকিছু ঠিকঠাক করতে পারি। “

” আর যদি না চাই? “

সজীব একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো, ” তাহলে কিছু করার নেই। “

” যখন বুঝতে পেরেছেন কিছু করার নেই তাহলে কেন করতেছেন? “

” আশা আছে তাই। “

রেস্টুরেন্টে নাস্তা করে আমরা চান্দের / চাদের গাড়িতে সাজেকের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। দশটার দিকে সেনাবাহিনীর ক্যাম্পের অনুমতি নিয়ে সবাই একটানা ছুটে চললাম মেঘের রাজ্যে।

আমরা এক টিমের সবাই মিলে দুটো গাড়িতে উঠেছি। আমি রিক্তা সোহানা যেই গাড়িতে, সেই গাড়িতে সজীবও উঠেছে। সম্পর্ক চলাকালীন সজীব একবার সাজেকে এসেছিল তার বন্ধুদের সঙ্গে।

হঠাৎ করে রাস্তার দুপাশে প্রকৃতির অপরুপ চিত্র ভেসে ওঠে। পাহাড়ের উপর দিয়ে রাস্তা। রাস্তার দুই পাশে যতদূর চোখ যায় যেন সবুজ সমুদ্রের মধ্য দিয়ে চলছি। ড্রাইভার গাড়ি ব্রেক করলেন। সজীবসহ আরো তিনজন মিলে গাড়ির ছাঁদে উঠে গেল। উপর থেকে আরো চমৎকার দৃশ্য উপভোগ করা যায়।

একটু পরে আমার সজীবের কথা মনে পড়লো। মনটানা রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে অনেক গুলো চকলেট দিয়েছিল রিক্তার হাতে।

বলেছিল, পথে রাস্তার পাশে অনেক বাচ্চারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাত নাড়বে। তাদের দেখলেই চকলেট গুলো যেন রাস্তায় ফেলি। ওরা সেই চকলেট কুড়িয়ে নিবে। আমি রিক্তাকে বলে সেই চকলেট বের করলাম। তারপর কিছুক্ষণ পর পর সত্যি সত্যি বাচ্চাদের দেখতে পাচ্ছিলাম। চলন্ত গাড়িতে বসে বসে চকলেট দেবার মজাই ছিল অন্যরকম। গাড়ির ছাঁদের উপর থেকে সজীবসহ বাকিদের উল্লাস কানে আসতে লাগলো।

সাজেক যখন পৌছলাম তখন দুপুর একটা। সবাই মিলে হোটেলে উঠলাম। একরুমে আমরা চারজন থাকবো। আমরা তিন বান্ধবী ও আমাদের সঙ্গে আরেকটা মেয়ে আছে। সবাই এক এক করে গোসল করে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।

টিমের সকলে একসঙ্গে দুপুরের খাবার খেতে গেলাম। এখানেও সেই ” মনটানা ” রেস্টুরেন্ট। সম্ভবত এদের শাখা ছিল খাগড়াছড়িতে। খাবার শেষ করে রুমে ফিরে বিছানায় শুয়ে গেলাম। সাজেকে নেটওয়ার্ক পাবার জন্য টেলিটক সিম সঙ্গে নিয়ে এসেছি। মোবাইলে ডাটা চালু করে সজীবের মেসেজ পেলাম।

” বিকেলে তোমার সঙ্গে যদি একটু ঘুরতে চাই তাহলে তুমি কি যাবে আমার সঙ্গে? “

মেসেজ সিন করে কোনো রিপ্লাই না দিয়েই ডাটা বন্ধ করলাম। খানিকটা ঘুমানো উচিত। বিকেলে হেলিপেড ও কঙলাক পাহাড় দেখতে যাবো।

ঘুম থেকে উঠে দেখি প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। আজকে আর পাহাড়ে যাওয়া হবে না। সন্ধ্যা হবার কিছু আগে বৃষ্টি কমলো তখন আমরা বের হলাম।

ডিনারের সময় স্পেশাল খাবার ছিল বাঁশের ভেতর পাহাড়ি মুরগির মাংস রান্না করা। দেখতে যেমন চমৎকার, খেতে তেমনই সুস্বাদু। বিকেলে ভালো করে ঘুরতে না পারার আক্ষেপটা ডিনার করতে গিয়ে কমলো।

রাত প্রায় এগারোটা। আমরা ছাদে বসে বসে সবাই গল্প করছি। হালকা শীত শীত লাগছে। একটু পরে সজীব সেখানে এলো। আমার সামনে এসে সে বললো,

” তোমার সঙ্গে একটু কথা আছে। “

” বলেন। “

” এরা তো এখানে আছে, চলো আমরা একটু সাইডে গিয়ে কথা বলি। “

ছাঁদের একপ্রান্তে গিয়ে বললাম ” বলেন। “

” তুমি তো জানো আমি কি বলতে চাই। “

” হ্যাঁ জানি, আর আপনিও জানেন আমার উত্তর কি হবে। “

” চলো না আমরা ঢাকায় গিয়ে বিয়ে করে ফেলি। সবকিছু ছেড়ে দিয়ে একটা চাকরি নেবো। দিনের অজস্র পরিশ্রম শেষে বাসায় ফিরে তোমার হাতে রান্না করা গরম গরম ভাত খাবো। “

” আমি আমার মায়ের মতো হতে চাই না। আমার মা আমাদের দুই ভাইবোনকে অনেক কষ্টে মানুষ করেছে। জানি না কেন জানি রাজনীতি সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করি আমি। “

” বললাম তো ছেড়ে দেবো। “

” ছেড়ে দিয়ে সুন্দরভাবে চলাচল শুরু করেন তারপর নাহয় দেখা যাবে। “

” অপেক্ষা করবে তো? “

” হ্যাঁ করবো। এখন আসি, সবাই খারাপ কিছু মনে করবে। “

★★

সকাল বেলা পাহাড়ের গায়ে মেঘ দেখতে দেখতে মনটাই ভালো হয়ে গেল। এতো কষ্ট করে এখানে আসা যেন স্বার্থক মনে হচ্ছে। সবাই মিলে প্রচুর ছবি তুললাম। এই প্রথম মনে হচ্ছিল সজীবকে বড্ড মিস করছি। এমন মনোমুগ্ধকর পরিবেশে সজীব সঙ্গে থাকলে বেশ হতো।
কিন্তু নিজের ইগোর জন্য হয়তো নিজ থেকে তাকে ডাকতে ইচ্ছে করলো না। তবে আমি ভেবেছিলাম সজীব আসবে, কিন্তু সে এলো না।

সকালের নাস্তা করে আমার হোটেল ত্যাগ করি। দশটার মধ্যে আবার সবাই গাড়ির কাছে আসি। সেনাবাহিনীর অনুমতি পেয়ে সবাই আবার সাজেক থেকে খাগড়াছড়ি রওনা দিলাম। সেখানে গিয়ে বিকেলে যাবো ঝর্না দেখতে, তারপর যাবো আলুটিলা গুহা ও ঝুলন্ত সেতু দেখতে।

ফেরার সময় সজীব আমাদের গাড়িতে উঠলো না। আমরা পিছনের গাড়িতে বসলাম আর সজীব গেল সামনের গাড়িতে। সেই আগের মতো দুপাশে সৌন্দর্য দেখতে দেখতে এগিয়ে চললাম।

প্রায় ঘন্টা খানিক যাবার পরে হঠাৎ আমাদের গাড়িটা থেমে গেল। সামনে আরো কিছু গাড়ি থেমে আছে। সামনেই দেখলাম আমাদের টিমের একটা ছেলে এগিয়ে এলো।

বললো ” আমাদের টিমের সামনে যে গাড়িটা ছিল সেই গাড়ি থেকে দুটো ছেলে পড়ে গেছে। গাড়ির ছাঁদে উঠে আগের মতো হৈ-হুল্লোড় করছিল। সামনে থেকে আসা একটা বাইকের সঙ্গে সংঘর্ষ এড়াতে ড্রাইভার যায়গায় ব্রেক করেন। হঠাৎ ব্রেক করায় ছাদে বসে তারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। একজন পড়েছে কাছেই। আর আরেকজনের গলার কাছে রাস্তার পাশের পাহাড়ি শক্ত গাছের ডাল ঢুকে গেছে।

ডাল কেটে ফেলার পরে গাছের সঙ্গে সামনে ৮/১০ ইঞ্চির মতো যেটুকু ছিল সেটুকুই যথেষ্ট ছিল। প্রচন্ড গতিতে পড়ার কারণে ডালের অনেকটা ঢুকে গেছে গলার কাছে। সবাই নেমে ধরে ধরে উঠানোর পর পরই সে মারা গেছে।

আমি রিক্তা আর সোহানা তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে নামলাম। সজীব গতকাল এভাবেই গাড়ির ছাঁদে উঠেছিল। বুকের মধ্যে যেন অজানা আতঙ্কে চিৎকার আসতে চাইছে।

মৃত সেই ছেলেটার লাশের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে দেখি ছেলেটা অন্য কেউ। খানিকটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম কিন্তু পরক্ষণেই ভাবলাম। যিনি মারা গেছে তিনিও তো কারো না কারো আপনজন। তার মৃত্যুর কারণে পরিবারে নেমে আসবে শোকের ছায়া।

একটু পরে দেখি সজীব আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। আমি সজীবের একটা হাত শক্তি করে জড়িয়ে ধরলাম।

সজীব বললো, ভয় পেয়েছিলে?

” হুম, অনেক। “

রাতের বাসে আমরা দুজন একসঙ্গেই বসলাম। যে ছেলেটা মারা গেছে তার লাশ এম্বুলেন্সে পাঠানো হয়েছে ঢাকায়। খাগড়াছড়ি এসে আমাদের আর কোথাও যাওয়া হয়নি। জানালা দিয়ে বাহিরের অন্ধকারে তাকিয়ে তাকিয়ে ভাবলাম,
” যে মারা গেছে সে যদি জানতো আজকের এই ভ্রমণে তার মৃত্যু হবে তাহলে কি সে কোনদিন আসতো? মৃত্যু কখন কার সামনে এসে উপস্থিত হবে কেউ জানে না। “

আগামীকাল কি হবে, আজ আমরা সেটা জানি না বলে পৃথিবী এতটা সুন্দর।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ