বুধবার, মে ১, ২০২৪
প্রচ্ছদটপনির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট

নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট

অবশেষে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনেই আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। তবে এক মাস তফসিল পিছিয়ে দেওয়ার দাবিও জানিয়েছে তারা। ১১ নভেম্বর দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জোটের শীর্ষ নেতারা।

গত কয়েকদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল, বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচনে যাবে এই রাজনৈতিক জোট। যদিও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে সরকারকে সাত দফা দাবি দিয়েছিলো বিএনপি-গণফোরাম-জেএসডি-কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ-নাগরিক ঐক্যসহ কয়েকটি দলের সমন্বয়ে গঠিত নতুন এ রাজনৈতিক জোট। সরকারের সঙ্গে দাবিগুলো নিয়ে দুই দফা সংলাপও করেছিলো। কিন্তু বিরোধী এই জোটের কিছু দাবি ও প্রস্তাবনা নাকচ করে দেয় সরকার। এই দরকষাকষি শেষেই নির্বাচনে যাওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এলো ঐক্যফ্রন্টের।

ড. কামাল হোসেনের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম অালমগীর বলেন, একটি অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সাত দফা দাবি থেকে সরে অাসছি না। এর সঙ্গে অামরা বর্তমান তফসিল বাতিল করে এক মাস পিছিয়ে নতুন তফসিল ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি। সেক্ষেত্রেও বর্তমান সংসদের মেয়াদকালেই নির্বাচন করা সম্ভব হবে।

ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র বলেন, একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের ন্যূনতম শর্ত এখন পর্যন্ত পূরণ করা হয়নি। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পরও বিটিভিসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। যা নির্বাচনী অাচরণের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। সাবেক সিইসি ড. শামসুল হুদাসহ সকল দল ও জনগণের অাপত্তি সত্ত্বেও ইভিএম বাতিল করেনি ইসি। এরকম একটা পরিস্থিতিতে একটা অংশগ্রহণমূলক গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হওয়া প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। এরকম প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের অান্দোলনের অংশ হিসেবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দায়িত্ব ইসি ও সরকারের উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতির পাশাপাশি ঐক্যফ্রন্ট কড়া নজর রাখবে সরকার ও  নির্বাচন কমিশনের প্রতি। জনগণের দাবি না মানা হলে উদ্ভূত পরিস্থিতির দায়-দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, গণতন্ত্রের সংকট সমাধানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সবসময় সমঝোতাকে গুরুত্ব দিয়েছে। দু’দফা সংলাপও হয়েছে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে। সংকট উত্তরণ থেকে সমঝোতা করার ন্যূনতম মানসিকতা অামরা দেখতে পাইনি। বিরোধী দল নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হবে না- প্রধানমন্ত্রী এমন কথা দিলেও সেই অাশ্বাস বাস্তবায়ন হয়নি। অাশ্বাসের একদিনের মধ্যেই ১২০০ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা  হয়েছে।

ফখরুল বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন না করে সরকারের অাজ্ঞাবহ হয়ে থেকেছে, সেটা এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে হওয়া নির্বাচন দেখলেই বুঝা যায়। সেই ধারাবাহিকতায় ইসি তড়িঘড়ি করেই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করলো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার নির্ধারিত ৯০ দিনের ৩৫ দিন বাকি থাকতেই। অথচ ১৯৯৬ সালে নির্ধারিত ৯০ দিন সময় শেষ হওয়ার ১৩ দিন আগে, ২০০১ সালে ১২ দিন আগে ও ২০১৪ সালে ২০ দিন অাগে নির্বাচনের তারিখ নির্ধারিত হয়েছিল। সরকারি দলের তফসিল পেছানোর অাহবান না জানানো, তড়িঘড়ি করে ইসির তফসিল ঘোষণায় অাবারও প্রমাণিত হয়, সরকারের মেইন টার্গেট হলো জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে বাইরে রেখে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির অাদলে নির্বাচন করা।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল হোসেন বলেন, জনগণের শক্তি বড় শক্তি। জনগণ ঐক্যবদ্ধ হলে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সম্ভব। অার এটি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মাধ্যমে ইতিমধ্যে হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত রায় চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু, জেএসডি সহ-সভাপতি তানিয়া রব ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন প্রমুখ।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ